গ্যাস সিলিন্ডারের দুর্ঘটনার বড় ক্ষয়ক্ষতি কমাতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যে, অগ্নিদুর্ঘটনা সম্পর্কে শিশুকাল থেকে সচেতনতা তৈরির জন্য আগামী বছর প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে এ সম্পর্কিত অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ ছাড়া দেশব্যাপী ফায়ার সার্ভিসের স্টেশনগুলোতে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবসায়ী ও অপারেটরদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডারের দুর্ঘটনা নিয়ে সচেতনতামূলক লিফলেট ও বিভিন্ন প্রচারণার পাশাপাশি এখন কমিউনিটি পর্যায়ে এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে ৭০৪টি অগ্নিকান্ডের দুর্ঘটনা ঘটে। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে ৪৪টি দুর্ঘটনা ঘটে। অথচ চলতি বছর এ পর্যন্ত ৫৮০টির মতো সিলিন্ডার দুর্ঘটনা ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বশীল সূত্রের দেওয়া তথ্যে, সিলিন্ডারজনিত দুর্ঘটনায় সচেতনতার অংশ হিসেবে চলতি বছরই পাঠ্যপুস্তকে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও ইতিবাচক সাড়া দেওয়া হয়েছে। মূলত প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ে অগ্নিদুর্ঘটনা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। আশা করা হচ্ছে আগামী বছরের পাঠ্যবইয়ে এসব অধ্যায় যুক্ত হবে। মূলত ছোটবেলা থেকেই শিশুদের অগ্নিদুর্ঘটনা সম্পর্কে সচেতন করা হলে ভবিষ্যতে বাসাবাড়ির দুর্ঘটনা অনেকটাই রোধ করা সম্ভব হবে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, তৈরি পোশাক খাতে যেভাবে প্রশিক্ষণ ও সচেতনতার কারণে অগ্নিদুর্ঘটনা কমে এসেছে, এলপিজি খাতেও একইভাবে সমন্বিত প্রশিক্ষণ জরুরি। বর্তমানে ফায়ার সার্ভিস ৫৩৭টি স্টেশনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এটি ধীরে ধীরে ৯৯৭টি স্টেশনে উন্নীত করা হবে। এ ক্ষেত্রে এলপিজি ব্যবসায়ী ও অপারেটররা চাইলে এসব স্টেশন থেকে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চলতি বছর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের নতুন মহাপরিচালক আসার পরপরই তার উদ্যোগে পাঠ্যপুস্তকে সিলিন্ডার দুর্ঘটনা সম্পর্কে বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। আগামী বছর নতুন পাঠ্যপুস্তকে এ বিষয়ে অধ্যায় থাকবে। তিনি আরও বলেন, কোনো কমিউনিটি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, পোশাক কারখানা বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যখন আমাদের কাছে অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধের ওপর প্রশিক্ষণ নিতে চান আমরা তাদের প্রশিক্ষণ দিই। আবার স্টেশনগুলো থেকেও এ ব্যাপারে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সাধারণত নিজ থেকে এসব প্রশিক্ষণ গ্রহণের ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ কম থাকে। কিন্তু যখন কোনো বড় অগ্নিদুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে তখন মানুষ বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার ব্যাপারে আবেদন করা হয়।
বর্তমানে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বড় বড় দোকানে যত্রতত্র এলপি গ্যাস সিলিন্ডার রাখা হয়। যদি সঠিকভাবে রাখা যায় তাহলে একটি গ্যাস সিলিন্ডার দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়। কিন্তু বাস্তবে এমন করা হচ্ছে না। আবার প্রতি ১০ বছর পর বিস্ফোরক অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে সিলিন্ডার পরীক্ষা করার নিয়ম থাকলেও এমনটি মানা হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলেন, সাধারণত গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের আগে লিকেজ বেশি হয়। আর রান্নাঘরে ভেন্টিলেশনের বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ সময় কোনো স্থানে বাতাস চলাচলের পথ বন্ধ থাকলে এবং সেখানে কোনো গ্যাস লিকেজ থাকলে সেটি তখন জমাটবদ্ধ গ্যাসে পরিণত হয়। তখন যে কোনো স্পার্ক বা ম্যাচের কাঠি জ্বালানো হলেই তা বিস্ফোরণে পরিণত হয়। তবে সহজেই সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয় না। আবার সিলিন্ডারের একটি মেয়াদ থাকে। যা এর গায়ে লেখা থাকে। আর এটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও বিস্ফোরক অধিদপ্তর এগুলো পরীক্ষা করতে পারে। এ পরীক্ষার মাধ্যমে সিলিন্ডারের মান কেমন তা যাচাই করা যায়। এজন্য প্রতি তিন থেকে পাঁচ বছর পর এই সিলিন্ডারগুলো পরীক্ষা করা উচিত। সিলিন্ডারের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি যেমন-হোসপাইপ, রেগুলেটর, বাল্ব এগুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এগুলোর মান পরীক্ষা করা উচিত। মানুষ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাধারণ মানের এবং কম দামি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে আগ্রহী। সেখানেই ব্যবহারকারী ভুল করেন। ব্যবহারকারীকে লিকেজ দুর্ঘটনা এড়াতে ব্র্যান্ডের ভালো মানের গ্যাস সিলিন্ডারের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা উচিত।