আত্মীয় নয় কিন্তু ইমোশনাল ডোনার বা ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিও দিতে পারবেন অঙ্গ। বিষয়টি যাচাই করবে একটি জাতীয় কমিটি। অঙ্গ বিক্রির সঙ্গে জড়িত হলে তার সাজা দুই থেকে তিন বছর। সদ্য পাস হওয়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশে রাখা হয়েছে এসব বিধান। চিকিৎসকরা বলছেন, কেউ যাতে অঙ্গ বিক্রির সুযোগ নিতে না পারে সেজন্য সতর্কতা ও জোর নজরদারি দরকার। দেশে প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার মানুষের কিডনি বিকল হয়। এর একটা বড় অংশের প্রয়োজন পড়ে কিডনি প্রতিস্থাপনের। কিন্তু আইনি জটিলতায় অনেকে তা করতে পারেন না।
গত ৩০ অক্টোবর পাস হয়েছে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ ২০২৫। কিডনি প্রতিস্থাপনকে আরও সহজ করতে এতে বড় পরিবর্তন হয়েছে তিনটি। এখন থেকে নিকট আত্মীয়দের মধ্যে ভাগনে-ভাগনি, ভাতিজা-ভাতিজি ও সৎ ভাইবোনও অঙ্গ দিতে পারবেন। আত্মীয় না হলেও সোয়াপ ট্রান্সপ্ল্যান্ট বা ভিন্ন দুই গ্রহীতা ও তাদের আত্মীয়দের মধ্যে ব্লাড গ্রুপ মিলে গেলেই অঙ্গ দেওয়া বা নেওয়া যাবে। তবে সবচেয়ে বড় সংশোধনী হলো ইমোশনাল ডোনার। কেউ কারও ঘনিষ্ঠ হলেও দিতে পারবেন অঙ্গ। এজন্য অঙ্গদাতার সামাজিক অবস্থান, আর্থিক সক্ষমতা, মানসিক সুস্থতা, অঙ্গগ্রহীতার সঙ্গে পূর্ব পরিচয়সহ অনেক বিষয় যাচাই করা হবে। অঙ্গদাতার ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১৮ বছর। আরও জানা যায়, বিষয়গুলো যাচাইয়ের জন্য থাকবে সাত সদস্যের জাতীয় কমিটি। এর প্রধান হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রশাসন এবং সদস্য সচিব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব। সদস্য হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, পুলিশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এবং মানবাধিকার কমিশন থেকে একজন করে থাকবেন।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, ‘আত্মীয়তার ব্যাপার নিশ্চিত করা কঠিন কাজ। এজন্য শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিচারিক দক্ষতা, আইনি দক্ষতা, কারিগরি দক্ষতা আছে এমন ব্যক্তিরাই অঙ্গদানের বিষয়ে সার্বিক তথ্য যাচাই করবেন। যাতে এটি নিশ্চিত করা যায় যে এখানে আর্থিক লেনদেন হয়নি, বরং অঙ্গদানকারী ব্যক্তি নিঃস্বার্থভাবে অঙ্গদান করছেন।’ জানা যায়, অঙ্গ বিক্রি প্রতিরোধে রাখা হয়েছে সাজার বিধান। অঙ্গ বিক্রেতা, সহায়তাকারী এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের কেউ এর সঙ্গে জড়িত থাকলে দুই থেকে তিন বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার অর্থদণ্ড দেওয়া হতে পারে। দেশে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন পাস হয় ১৯৯৯ সালে। এরপর ২০১৮ সালে আনা হয় বেশ কিছু সংশোধনী।