দেশের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংক সহায়িত ৪০০০ কোটি টাকার হায়ার এডুকেশন অ্যাকসেলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (হিট) প্রকল্পে ভয়াবহ স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) একদল শিক্ষক ।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত, অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম, অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম, অধ্যাপক ড. সাহাবুল হক ও অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দিন।
শিক্ষকদের অভিযোগ, হিট প্রকল্পে ভালো এবং স্বীকৃত গবেষকদের বাদ দিয়ে লো প্রোফাইল ও কম সাইটেশনধারী শিক্ষকদের প্রজেক্ট নির্বাচিত করা হয়েছে। অতীতে দেশের বিভিন্ন ব্লাকলিস্টেড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রজেক্টও নির্বাচন করা হয়েছে। এক ফিল্ডের শিক্ষক দিয়ে অন্য ফিল্ডের প্রজেক্ট মূল্যায়ন করা হয়েছে। এমনকি প্রজেক্ট নির্বাচনে রাজনৈতিক প্রভাবের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।
সম্মেলনে শিক্ষকরা বলেন, প্রজেক্ট নির্বাচনে মেধা ও যোগ্যতার যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে। আমাদের পর্যবেক্ষণ বলে, প্রায় ৪০ শতাংশ লো প্রোফাইলধারী (টোটাল সাইটেশন ১০০ এর কম) গবেষকদের প্রজেক্ট নির্বাচন করা হয়েছে। এছাড়া ৫০০ সাইটেশনের কম আছে এমন ৪০ শতাংশ গবেষকদের প্রজেক্ট নির্বাচন করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত গবেষকদেরকে বাদ দিয়ে তুলনামূলক কম গবেষণা ও সাইটেশন রয়েছে এমন গবেষক নির্বাচন করা হয়েছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
শিক্ষকরা আরও বলেন, রিভিউ কমিটিতে যে বিষয়ে যারা এক্সপার্ট তাদেরকে রাখা হয়নি। এমনকি পিএইচডি করেননি এমন ব্যক্তিকেও রিভিউ কমিটিতে রাখা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় গবেষণার জন্য অর্থায়নে বিচারহীনতা, স্বচ্ছতার অভাব এবং রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। ফলে প্রকৃত গবেষকরা বঞ্চিত হয়েছেন, যা গবেষণা ক্ষেত্রে এক ভয়াবহ সংকট বলেও অভিযোগ করেন তারা।
হিট প্রকল্পে শিক্ষকদের আনিত অভিযোগসমূহ হলো- রিভিউ প্রক্রিয়ার গুণগত মান ও স্বার্থের দ্ব›দ্ব রয়েছে, ইউজিসি থেকে যে ব্লাইন্ড পিয়ার রিভিউ এর কথা বলা হয়েছে এই দাবি মিথ্যা, প্রেজেন্টেশনে নিয়মের পরিপন্থি মূল্যায়ন, অঘোষিত বিভাগভিত্তিক বৈষম্য, প্রাক-বাছাই পদ্ধতির অনুপস্থিতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি অবহেলা, রিসার্চ কোয়ালিটির নামে বিভ্রান্তি এবং অনেক রিসার্চ ফিল্ডের প্রতি অবহেলা। এছাড়াও, করোনা মহামারিকালে জাতীয় অবদান থাকা স্বত্বেও প্রকল্প বাতিল, শিল্প সহযোগী (পার্টনারিং অ্যাগ্রিমেন্ট) ছাড়াই ইন্ডাস্ট্রি প্রজেক্টে অনুমোদন, বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক বা বিভাগভিত্তিক প্রকল্প সংখ্যা ও অঞ্চলভিত্তিক বৈষম্য, নৈতিক ও আদর্শগত সংকট, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও তার প্রভাব, চূড়ান্ত বাছাই বোর্ডে তাচ্ছিল্যমূলক ব্যবহার এবং হিট রিভিউ পদ্ধতির মাধ্যমে এবং ব্যবস্থাপনার নামে অর্থের অপচয় করা হয়েছে।
সম্মেলনে হিট প্রকল্পের নানা অভিযোগ এনে শিক্ষকরা তিনটি দাবি উত্থাপন করেন। শিক্ষকদের দাবিসমূহ না মানা হলে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়ে আইনি প্রক্রিয়া অবলম্বন করবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক তানজিম উদ্দিনকে ফোন দিলে যোগাযোগ নাম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, ইউজিসি বাস্তবায়নাধীন ‘হিট’ প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকারের অর্থের পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক ঋণ সহায়তা দিচ্ছে। পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের কাজ ২০২৩ সালের জুলাই থেকে শুরু হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ১৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। মোট ব্যয়ের মধ্যে দুই হাজার ৩৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বাংলাদেশ সরকার এবং এক হাজার ৯৮৩ কোটি ১১ লাখ টাকা বিশ্বব্যাংক বহন করবে।
জানা যায়, হিট প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) নিয়োগ পরীক্ষায় ৩২ প্রার্থীর মধ্যে প্রথম হয়েছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোলায়মান। গত বছরের ১৪ মার্চ ইউজিসি তাকে নিয়োগ দেয়। কিন্তু ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের মৌখিক নির্দেশে মাত্র এক দিনের মাথায় তার নিয়োগ বাতিল করে মন্ত্রণালয়।
এসব অভিযোগ এনে পুনরায় প্রজেক্ট বিবেচনার দাবি জানান শাবিপ্রবির শিক্ষকরা।
বিডি প্রতিদিন/এএ