চাঁদপুরে ইলিশের ভরা মৌসুম শুরু হলেও আড়ৎগুলোতে আমদানি কম হওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছে মৎস্য আড়ৎ ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। বিগত বছরের তুলনায় এবার মাছের আমদানি অনেক কম হওয়ায় ব্যবসা ও সংসার চালাতে হিমশিমের কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে কয়েকদিনের মধ্যে আড়ৎগুলোতে ইলিশের আমদানি বাড়বে। সংশ্লিষ্টদের হতাশ না হওয়ার আহ্বান জেলা মৎস্য বিভাগের। জেলা মৎস্য কার্যালয়ের তথ্য মতে, চাঁদপুরে ছোট বড় দেড় শতাধিক মৎস্য আড়ৎ রয়েছে।
চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় মার্চ-এপ্রিল দু’মাস জাটকা সংরক্ষণ অভিযান শেষে পহেলা মে থেকে জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে নামেন। ওই সময় নদীতে বৃষ্টিপাত ও পানি প্রবাহ কম থাকায় জেলেদের জালে ধরা পডছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। এতে জুন, জুলাই ও আগস্ট মাস বর্ষায় পর্যাপ্ত ইলিশ পাওয়ার আশায় অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকেন জেলে, মৎস্য ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।
অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার চাঁদপুর বড় স্টেশন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ইলিশের পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, আড়তে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না আসায় পরিবার পরিজন নিয়ে সংসারের ব্যয়ভার বহন নিয়ে হিমশিমের কথা জানান মৎস্য শ্রমিকরা। তারা সরকারের কাছে জেলেদের ন্যায় তাদের মৎস্য কার্ডের দাবি জানান।
মৎস্য শ্রমিক মফিজ বেপারী ও জাহাঙ্গীর জানান, জৈষ্ঠ্য, আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র সিজন শুরু হলে, কাজের চাপে ভাত খাওয়ার সুযোগ পেতাম না। প্রতিদিন আমাদের ভালো আয় রোজগার হতো। বিগত ২/৩ বছর যাবত তেমন একটা সুবিধায় নেই। বর্তমানে সিজন শুরু হলেও নদীতে মাছ নাই, আমাদের কর্ম নাই, ছেলে-মেয়ে নিয়ে সংসার চালাতে খুবই অসুবিধা। সরকার প্রতি বছর দুইবার অভিযান দেয়, তখন জাটকা ইলিশ রক্ষায় দু’মাস ও মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিন অভিযান দেয়। দু’দফা নিষেধাঞ্জা চলাকালে সরকার থেকে জেলেরা গরু-ছাগল, সেলাই মেশিন পায়। কিন্তু মাছ ঘাটের শ্রমিকরা কোন সহযোগীতা পায় না। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যে, মাছ ঘাটের শ্রমিকদের দিকে একটু তাকায়। যাতে করে সরকারের কাছ থেকে আমরা সহযোগিতা পেয়ে পরিবার নিয়ে খেয়ে পরে ভালোভাবে চলতে পারি এই আমাদের আবেদন।
ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন ও সম্রাট বেপারী জানান, বর্তমানে ভরা মৌসুম হলে লাভ হবে কি, নদীতে তো মাছ নাই। শুধু মাছ ঘাটের ব্যবসায়িরা না, এই মাছের সাথে লেবার, সরকার, জেলে যারাই জড়িত প্রত্যেকের অবস্থাই ভালো নেই। ভালো না বলতে একটা কথাই সর্বশেষ, আমাদের লাইফ শেষ। লাইফ শেষ বলতে আর কিছুই নেই, আমাদের এই পরিস্থিতি। অন্যান্য বছরে এই সময়ে চাঁদপুর মাছ ঘাটে ৭-৮শ’ মণ ইলিশের আমদানি হলেও এবার আমদানি হচ্ছে ৬০-৭০ মণ। এবার ইলিশের আমদানী খুবই কম। এক কেজি সাইজের লোকাল ইলিশ ২৬শ’ থেকে ২৭শ’ টাকা, ৭-৮শ’ গ্রামের লোকার ইলিশ ২৩শ’ থেকে ২৪শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সমুদ্র উপকূলীয় (নামার) মাছ আমদানিও অনেক কম। নামার মাছের থেকে লোকাল ইলিশের দাম কেজিতে ২/৩শ’ টাকা বেশি হয়ে থাকে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক প্রিয়াংকা সাহা বলেন, কয়েকদিন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে আমাদের জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে পারেনি, তাতে আমাদের মাছেরও কিছুটা ঘাটতি ছিল। আমরা আশাবাদী যেভাবে মাছ আসতেছে, সামুদ্রিক ইলিশের প্রাচুর্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নদীর ইলিশও ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। এতে করে দামও কমের দিকে আছে। আমরা আশাবাদী জেলে, মৎস্যজীবী, আড়ৎদার ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা হতাশ হবেন না। সামনের দিকে ইলিশের প্রাচুর্যতা বাড়বে এবং সাধারণ জনগনও ইলিশ মাছ পেয়ে খুশি থাকবেন।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল