২৪'শের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার বছর না পেরোতে ফের পানিতে ডুবেছে ফেনীর জনপদ।
জেলার (ফুলগাজী-পরশুরাম-ছাগলনাইয়া) তিন উপজেলায় মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩৬টি অংশে ভাঙন দেখা দেয়। পানি কমার সাথে সাথে এবার এই অঞ্চলে ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষতচিহ্ন।
সূত্রে জানা যায়, বন্যায় প্লাবিত হওয়া পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার কোথাও কোথাও এখনো পানি রয়েছে। সড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় গন্তব্যে পাড়ি দেওয়া মানুষজনের মনে স্বস্তি ফিরেছে। ফুলগাজী উপজেলায় বন্যার পানি কমলেও পানি নামছে ধীরগতিতে। এছাড়া ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা এলাকার আংশিক অংশে এখনো পানি নামেনি।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বাঁধ ভাঙনে গত মঙ্গলবার থেকে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। ধীরে ধীরে এ দুই উপজেলায় পানি কমে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার আংশিক এলাকা। প্লাবিত ১১২টি গ্রামের লাখো মানুষ পড়েন চরম ভোগান্তিতে। এছাড়া ৮৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার মানুষ আশ্রয় নেন। তাদের মধ্যে ইতোমধ্যে ৫ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরছে। দুর্গত এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে ২৩০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন।
জেলা কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, এবারের বন্যায় মৎস্য খাতে ৮ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, কৃষিতে ৫ হাজার ৫৬৪ দশমিক ৬১ হেক্টর ফসলি জমি দুর্যোগে আক্রান্ত ও প্রাণিসম্পদে ৬৪ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫০ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পুরোপুরি পানি নেমে যাওয়ার পরই ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত পরিমাণ তুলে ধরা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা।
এসময় স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, গেল বছরের বন্যায়ও মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের শতাধিক স্থানে ভেঙেছিল। পরে ২০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে বাঁধগুলো মেরামত করা হলেও বছর না পেরোতে আবারও ভেঙেছে। পাউবোর যথাযথ তদারকি ও অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বাঁধ ভেঙে প্রতিবছর এমন দুর্ভোগে পড়তে হয় বলছেন তারা।
ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, জেলায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সাড়ে ২৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে শুকনো খাবার, গো-খাদ্য ও শিশু খাদ্যের আরও ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী ত্রাণ কার্যক্রমে প্রশাসনকে সহযোগিতা করছে। পরিস্থিতি ধীরেধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন