কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমারখালীর গড়াই নদীর ওপর নির্মিত সৈয়দ মাসুদ রুমী সেতুর টোল আদায় বন্ধের দাবিতে প্রায় দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতা।
রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সেতুর টোলপ্লাজা এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। এতে সেতুর দুইপাশে প্রায় ৮-১০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। চরম ভোগান্তিতে পড়েন হাজারো পথচারী।
পরে জনদুর্ভোগের খবর পেয়ে ছুটে আসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম এবং সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মনজুরুল করিম, সেনাবাহিনী ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা দুইদিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ তুলে নেন এবং সেনাবাহিনী যান চলাচল স্বাভাবিক করেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, টোলপ্লাজা এলাকায় সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করছেন আন্দোলনকারীরা। টোলপ্লাজার দুই দিকে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজট। অনেকেই গাড়ি থেকে নেমে পায়ে চলাচল করছেন।
এ সময় খালেদা খাতুন নামের এক পথচারী বলেন, সড়ক বন্ধ করে অবরোধ চলছে। এক ঘণ্টা গাড়িতে বসে থেকেও অবরোধ ছাড়ল না। অফিসের সময় হয়ে গেছে। তাই হেঁটে যাচ্ছি।
আদালতে হাজিরা দিতে যাচ্ছিলেন খোকসার রাজু আহমেদ। তিনি বলেন, অনেক সময় অপেক্ষা করছি। কোর্টের সময়ও হয়ে গেছে। জনগণের বেশ ভোগান্তি হচ্ছে। তবুও একদিনের ভোগান্তির বিনিময়ে স্থায়ীভাবে টোল বন্ধ চাই।
কুমারখালী নাগরিক কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য কে এম আর শাহীন বলেন, সেতুর নির্মাণ ব্যয় অনেক আগেই উঠে গেছে। তবুও সরকারি আমলারা টোলের নামে চাঁদাবাজি করার পাঁয়তারা করছে। স্থায়ীভাবে টোল বন্ধের দাবিতে আমরা আজ কর্মসূচি পালন করছি। তার ভাষ্য, সড়ক অবরোধ থাকায় চরম জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।
সওজ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালে ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করে সওজ। ২০০৫ সাল থেকে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ইজারাদারের মাধ্যমে টোল আদায় করা হয়। ২০২৪ সালের জুন মাসে তিন বছর মেয়াদি ইজারা শেষ হলে খাস আদায় করছে সওজ বিভাগ। প্রতিদিন তিন-চার লাখ টাকা খাস আদায় করত তারা। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ৭ আগস্ট সকালে টোল আদায় বন্ধের দাবিতে টোলপ্লাজায় আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। সে সময় টোলপ্লাজা ছেড়ে পালিয়ে যান আদায়কারী। ১৩ আগস্ট সওজ কর্তৃপক্ষ টোল আদায় করতে গেলে বিক্ষুব্ধ জনতা বাধা দেয়। এরপরও কয়েক দফা হামলা হয়েছে। নিরাপত্তার অভাবে সেখান থেকে চলে আসেন কর্মকর্তারা। এরপর থেকে টোল আদায় বন্ধ রয়েছে। এতে সরকার প্রতিদিন তিন-চার লাখ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে।
আরও জানা গেছে, টোল চালুর বিষয়ে ২৬ জুন জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে একটি আলোচনা সভা হয়। তবে সেদিন টোল আদায় সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আবার টোল চালু হতে পারে-এমন ধারণা থেকে স্থায়ীভাবে টোল বন্ধের দাবিতে রবিবার মহাসড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন কয়েক হাজার বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতা।
আয়োজকদের পক্ষে উপজেলা গণতন্ত্র ছাত্র সংসদের জ্যেষ্ঠ সংগঠক আলামিন হোসেন আকাশ বলেন, স্থায়ী টোল বন্ধ এবং টোল ঘর অপসারণের দাবিতে আমরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছি। প্রশাসন ও সওজের পক্ষ থেকে দুইদিন সময় চেয়েছেন। দুইদিনের মধ্যে টোল বন্ধের প্রজ্ঞাপন জারি করা না হলে ডিসির কার্যালয় ঘেরাও করা হবে।
কুষ্টিয়া সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মনজুরুল করিম বলেন, ১৩ আগস্ট থেকে টোল আদায় বন্ধ থাকায় প্রায় ১১ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। আন্দোলনকারীদের দাবির কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দুইদিনের মধ্যে একটি সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
তবে এ বিষয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম। তবে তিনি বলেন, জনগণের দাবির বিষয়টি ডিসি স্যার ও সওজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
প্রায় দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ থাকায় দীর্ঘ যানজট ও ভোগান্তির কথা স্বীকার করেছেন কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলাইমান শেখ। তিনি বলেন, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে প্রশাসনের ফলপ্রসূ আলোচনা হলে অবরোধ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই