দিনাজপুরের গবাদিপশুর মাঝে দেখা দিয়েছে লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) রোগ। মশা-মাছিবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে শত শত গরু। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে এক মাসে ফুলবাড়ীর অনেক গরু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে চরম দুশ্চিন্তায় খামারিসহ প্রান্তিক গবাদিপশু পালনকারীরা।
মারা যাওয়া বা আক্রান্ত গরুর সংখ্যা নিরুপণ সম্ভব না হলেও বিভিন্ন মাধ্যমে ১৫-১৮টি গরু মারা যাওয়ার কথা জানা গেছে।
তবে এই রোগ ছোট গরু-মহিষে বেশী দেখা দেয়, তাই কোরবানির হাটে এর কোন প্রভাব পড়বে না বলে ফুলবাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সারোয়ার হাসান জানান।
জানা গেছে, লাম্পি স্কিন ডিজিজ একটি ভাইরাসজনিত চর্মরোগ যা গরু মহিষকে আক্রান্ত করে। বছরে অন্তত দুবার এ রোগে আক্রান্ত হয় গবাদিপশু। আক্রান্ত গরুর শরীরে প্রথমে চাকা চাকা হয়ে ফুলে ওঠে। এক পর্যায়ে লোম উঠে যায়, ক্ষত হয়ে শরীরের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পা ফুলে যায়, শরীরে উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর আসে। জ্বরের সাথে নাক-মুখ দিয়ে লালা বের হয়। খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। দুর্বল হয়ে গবাদি পশুর দুধ উৎপাদন ও ওজন কমে যায়। চামড়ার গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। খুব বেশি আক্রান্ত হলে ছটফট করতে করতে গরু মারা যায়। বাছুরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে বলে এই রোগে বাছুরের মৃত্যুর হার বেশি থাকে। তবে সঠিক চিকিৎসায় গরু ভালও হয় বলে চিকিৎসকরা বলছেন।
ফুলবাড়ীর শিবনগর গ্রামের আব্দুল্লাহ আল মামুন রয়েল বলেন, লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে এ গ্রামেই এ পর্যন্ত ৭/৮টি গরু মৃত্যু হয়েছে, বিশেষ করে ছোট গরু বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ভ্যাক্সিন সরকারিভাবে আমদানি করা হলে এবং গরুর জন্য সিঙ্গেল ডোজের ভায়েল বাজারজাত করলে খামারিরা উপকৃত হত।
পুরাতন বন্দর এলাকার রুবিনা খাতুন বলেন, আমার পাশের বাড়িতে বাছুর গরু লাম্পিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। আমার গরুকে লাম্পি ধরার আগেই ভ্যাক্সিন দিতে চাইছিলাম। একটি ভ্যাক্সিনের দাম পড়ে ২৭০০-৩০০০ টাকা, তাই দিতে পারিনি। বর্তমানে দুইটা গরু লাম্পিতে আক্রান্ত হয়েছে।
শিবনগর ইউপি চেয়ারম্যান ছামেদুল ইসলাম বলেন, এই রোগে আক্রান্ত হয়ে এই এলাকায় ১৫-১৬টি গরু মৃত্যুর খবর পেয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের জন্য কোন বরাদ্দ পাইনি।
এ ব্যাপারে ফুলবাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সারোয়ার হাসান বলেন, এ রোগের সচেতনতার জন্য গ্রামে গ্রামে উঠান বৈঠক করা হচ্ছে। ১টি ভায়েলে ১০টি গরুকে ভ্যাক্সিন দেয়া যায়, দাম ২৭শ’ টাকা। সরকারিভাবে আমদানি করে টিকার সাশ্রয়ী মূল্য সরবরাহ করলে খামারিরা উপকৃত হবেন।
তিনি আরও বলেন, এই লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) বছরে ২ বার দেখা দেয়। এটি ভাইরাসজনিত মৌসুমী চর্মরোগ যা মশা-মাছির মাধ্যমে ছড়ায়। কোনো গবাদি পশু এ রোগে আক্রান্ত হলে তাকে পৃথক করে মশারির নিচে রাখতে হবে। আক্রান্ত গরুকে কোনভাবেই এন্টিবায়োটিক দেয়া যাবে না। কেননা, আক্রান্ত প্রাণি এমনিতেই দুর্বল হয়ে পড়ে। এবার রোগটি নিমূলে আগে থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। রোগটি সাধারণত এপ্রিল মাসে বেশী হয়। তখন হয়তো কিছু মারা যেতে পারে। কিন্তু কেউ আমাকে জানায়নি। এখন বৃষ্টি হচ্ছে। তাই এ রোগ প্রবনতা কমে গেছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ফুলবাড়ী উপজেলায় নিবন্ধিত গরুর খামার রয়েছে ৪১টি। এর মধ্যে দুগ্ধ খামার ৩৪টি, মোটাতাজাকরণ খামার ৬টি ও ছাগল খামার ১টি। অন্যদিকে অনিবন্ধিত খামার ৬৬৭টি। এর মধ্যে দুগ্ধ খামার ২৮০টি, মোটাতাজাকরণ খামার ২৫৭টি, ছাগলের খামার ১১১টি ও ভেড়ার খামার ১৯টি। উপজেলায় মোট গরুর সংখ্যা রয়েছে এক লাখ ৪৩ হাজার ৬৩টি। মহিষ ৭০টি, ছাগলের সংখ্যা ৮৫ হাজার ৬শ’ ৯০টি, ভেড়া ৫ হাজার ৫৩টি। এর মধ্যে কুরবানি যোগ্য গরুর সংখ্যা ৬ হাজার ৬৪৫টি, ছাগলের সংখ্যা ৭ হাজার ৭০৫টি এবং ভেড়ার সংখ্যা ১ হাজার ৪৫০টি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল