দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ-ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই ক্লাস করছে চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এসব স্কুলের ভবনের ছাদে ফাটল। কোথাও প্লাস্টার খসে পড়ছে। কোথাওবা রড বেরিয়ে আসছে। ফলে আতঙ্ক নিয়েই শিক্ষার্থীদের পাঠগ্রহণ করতে হচ্ছে। এতে মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এসব স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণের দাবি করেছেন। এই জরাজীর্ণ ভবনের কারণে অনেক সময় অভিভাবকেরা বিদ্যালয়ে আসতে বাঁধা-নিষেধ করে থাকেন শিক্ষার্থীদের।
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ অবস্থা। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন বিদ্যালয়গুলোর সমস্যা সম্পর্কে অবগত হয়ে ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ এলেই কার্যক্রম শুরু করা হবে।
স্থানীয় ও শিক্ষার্থীরা জানায়, খানসামার কৌগাঁও পাঠানপাড়া, বেলপুকুর, আঙ্গারপাড়া ও পূর্ব নলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই কোনো আধুনিক ভবন, নেই উপযুক্ত অবকাঠামো। ভবনগুলো জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। বিদ্যালয়গুলোর ভবনের ছাদে ফাটল। রড বেরিয়ে গেছে। এসব বেরিয়ে যাওয়া রডে মরিচা ধরেছে। কোথাও কোথাও প্লাস্টার খসে পড়ছে।
খানসামার ভাবকী ইউপির কৌগাঁও পাঠানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৭-৯৮ অর্থ বছর এলজিইডির অর্থায়নে একতলা ভবন নির্মিত হয়। যা বর্তমানে ভগ্নপ্রায় অবস্থা। দেয়াল ও ছাদ থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। দেয়াল ও ছাদ থেকে খসে পড়ছে চুন ও ইটের গুঁড়ো। জরাজীর্ণতার কারণে কক্ষ ছেড়ে অনেকে পাশের টিনশেডে ক্লাস করছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইয়াসিন আলী বলেন, প্রতিনিয়তই ভবনটি ধসে পড়ার আশঙ্কা থাকে। অনেকবার কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিতভাবে জানানো হলেও এখনও কোনো সুরাহা হয়নি।
ভেড়ভেড়ী ইউপির বেলপুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ২০১৯ সালে উপজেলা প্রকৌশলী পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। তারপরেও সেই ভবনে চলছে পাঠদান। শিক্ষার্থী সিনথিয়া আক্তার বলেন, বিদ্যালয়ের ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। দেয়াল থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার চেয়ে ভয়ই বেশি লাগে। প্রধান শিক্ষক মীর আবুল খায়ের বলেন, বছরের পর বছর ধরে ভবনটি পরিত্যক্ত হলেও বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস নিতে বাধ্য হচ্ছি।
আঙ্গারপাড়া ইউপির আঙ্গারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০৫ জন। বিদ্যালয়ে জরাজীর্ণ দুইটি টিনশেড ঘর ও একটি ছোট পাকা ভবনে কোনোরকমে চলছে শিক্ষার্থীদেন পাঠদান। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী বাবু ভুঁইয়া জানায়, বৃষ্টি হলে ক্লাস রুমে পানি পড়ে। মাথায় পলেস্তারা খসে পড়ার ভয় থাকে। প্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহার বলেন, এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বসার জায়গা নেই। শ্রেণিকক্ষে আলো-বাতাস প্রবাহ নেই। বর্ষা মৌসুমে টিনের ওপর বৃষ্টি পড়লে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কথাবার্তাও শোনা যায় না।
এছাড়া গোয়ালডিহি ইউপির পূর্ব নলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৯৯৩-৯৪অর্থ বছরে নির্মিত ভবনটিতে বিস্তর ফাটল দেখা দিয়েছে। ভবনের অনেক স্থানে ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। বের হওয়া রডে ধরেছে মরিচা। শিক্ষার্থী সানজিদা আক্তার ও মাসুদ বলেন, বিদ্যালয়ের ছাদের নিচে বসতে আমাদের ভয় লাগে এবং ভয় হয়। স্যার-ম্যাডামরাও দেয়ালের পাশে বসতে নিষেধ করেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) আমিনুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের ভবনের দেয়াল ফেটে গেছে।ছাদে বিশাল ফাটল দেখা দিয়েছে। আতঙ্কের মধ্য দিয়েই ক্লাস নিতে হয়।
এ ব্যাপারে খানসামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হুমায়ুন কবির তালুকদার বলেন, বিদ্যালয়গুলোর সমস্যা সম্পর্কে অবগত রয়েছি। ইতোমধ্যেই এসব বিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ আসলেই কার্যক্রম শুরু করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল