এক সময় প্যারাবনের কারণে কক্সবাজারে সাগর উপকূলে ছিল সবুজের সমারোহ। নানান অজুহাতে তা উজাড় করা হচ্ছে। এখন তার বেশির ভাগ স্থানে চোখ পড়ে লবণের মাঠ, চিংড়ি ঘের অথবা সামুদ্রিক মাছ শুকানোর স্থান। বছরের পর সিন্ডিকেটের হাতে ধ্বংস হচ্ছে প্যারাবন, অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
পরিবেশবিদদের মতে, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, সুনামির মতো সামুদ্রিক দুর্যোগ থেকে উপকূলকে বাঁচায় বনাঞ্চল। এ জন্য কক্সবাজার ও এর আশপাশে তৈরি করা হয়েছিল কৃত্রিম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট ‘প্যারাবন’। গত দুই দশক ধরে সেই প্যারাবন ধ্বংস করছে কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ। ২০ বছর আগেও দ্বীপের কুতুবদিয়া চ্যানেল ধরে ছিল প্যারাবন। সেই সময় থেকেই লবণ চাষ আর মাছ শুকানোর কথা বলে বন উজাড় চলছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক কামাল হোসাইন বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে কারণে উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগ ঝুঁকি এমনিতেই বাড়ছে। বনাঞ্চল উজাড় তা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। তিনি বলেন, নানান কারণে উপকূলের প্রায় ৯০ হাজার হেক্টর ম্যানগ্রোভ প্যারাবন ধ্বংস হয়ে গেছে। ওই সব এলাকায় নতুন করে বনায়ন না হলে ভবিষ্যতে সুনামি, জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগে ক্ষতি বাড়বে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘কোস্ট ট্রাস্ট’ গবেষণা প্রতিবেদনে কুতুবদিয়ার বিষয়ে বলেছে, শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় নয়, প্যারাবন ধ্বংস উপকূলে ভাঙনও ত্বরান্বিত করে। প্যারাবন না থাকায় বেড়িবাঁধ উপচে লবণাক্ত পানি ঢুকছে। ভাঙন অব্যাহত থাকলে আগামী ৪০-৪৫ বছরে কক্সবাজার উপকূলের কুতুবদিয়া সমুদ্রগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যেমনটি অন্যন্য উপকূলেও হতে পারে।
চকরিয়া, সোনাদিয়া ও আশপাশে এলাকায়ও চলছে বন ধ্বংস। একটি মহল ধ্বংসযজ্ঞ চালালেও তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, পেট্রল ঢেলে আগুনে বনাঞ্চল পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পাশাপাশি পাখির আবাসস্থল উজাড় হচ্ছে। দ্বীপের এই প্যারাবনে ২৫০ প্রজাতির মাছ, ১৫০ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ৫০ প্রজাতির কাঁকড়া, ৪০ প্রজাতির চিংড়ি, ১৭০ প্রজাতির পাখি, ৫০ প্রজাতির বালিয়াড়ি উদ্ভিদ ও ১৫ প্রজাতির ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ, ৩ প্রজাতির ডলফিন, সামুদ্রিক কাছিম, মেছোবাঘ, শিয়াল, সাপ, গুইসাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর বসবাস রয়েছে। এখন অর্ধেকের বেশি বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হেদায়েত উল্যাহ বলেন, দুটি চিংড়ি ঘের উচ্ছেদ করা হয়। অবশিষ্ট অবৈধ চিংড়ি ঘেরগুলো উচ্ছেদ করতে কত টাকার প্রয়োজন, বনায়নের বিপরীতে কী পরিমাণ খরচ লাগবে তার প্রাক্কলন নির্ধারণের জন্য সহকারী কমিশনারসহ (ভূমি) তিনজন সরকারি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। একই সঙ্গে অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে।