পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার কৈডাঙ্গায় গুমানী নদীর ওপর সেতু না থাকায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ১৫টি গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। তারা প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খেয়া নৌকা ও রেলব্রিজ দিয়ে পারাপার করছেন। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ও দাবি গুমানী নদীর ওপর স্থায়ী সেতু নির্মাণের। বিশেষ করে বিল অঞ্চলের কৃষকদের উৎপাদিত ফসল পরিবহন, জরুরি সেবাপ্রার্থী ও বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, গুমানী নদীর দুই পাড়ের কৈডাঙ্গা, নতুনপাড়া, পাঁচ বেতুয়ান, বড় বেতুয়ান, বিএলবাড়ী, চর-ভাঙ্গুড়া, এরশাদনগর, সুজা, চাচকিয়া, কালিয়াকৈর, পুইবিল, লক্ষ্মীকোল ও দিলপাশাসহ বেশ কিছু গ্রামের মানুষের প্রতিদিন এই নদী পারাপার হতে হয়। সন্ধ্যার পর খেয়া নৌকা বন্ধ হয়ে গেলে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে দুই পাড়ের যোগাযোগ। নদীর পাশেই ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগের একমাত্র রেলপথে ব্রিজ থাকলেও সেটি শুধু ট্রেন চলাচলের জন্য। অনেকে বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রেলব্রিজের ওপর দিয়েই পার হন। এতে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করলে প্রায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার ঘুরতে হয়-যা সময় ও অর্থ উভয় দিক দিয়েই কষ্টসাধ্য গ্রামবাসীর জন্য। স্থানীয় বাসিন্দা রায়হান আলী বলেন, বর্ষার সময় নৌকায় পারাপার খুবই বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। অনেক সময় ছোট শিশু ও বয়স্কদের নিয়ে নদী পার হতে হয় আতঙ্ক নিয়ে। কৃষক শরিফুল ইসলাম শান্ত জানান, নদীর ওপারের কৃষিজমিতে চাষাবাদ করতে গেলে অনেক সময় নৌকা বন্ধ থাকে। আবার বিকল্প রাস্তা দিয়ে যেতে সময় ও ভাড়া বেশি খরচ হয়। এতে আমাদের কৃষিকাজে চরম সমস্যা হয়।
ওয়ালীউল্লাহ ইসলাম নামের একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে নৌকায় ঘুরতে খুবই ভালো লাগে। শহর থেকে বন্ধুরা এসে ঘুরে মজাও পাই। কিন্তু অভিভাবকদের বর্ষায় কষ্ট দেখলে আর কিছুই ভালো লাগে না। তখন ভাবি আমাদের জন্মটাই হয়েছে কষ্ট করার জন্য।’ কৈডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাকরোজা খাতুন বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন এই নদী পাড়ি দিয়ে আসে। নৌকার অভাবে অনেকে অনুপস্থিত থাকে, যা তাদের পড়াশোনায় প্রভাব ফেলছে। গুমানী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা হলে শিক্ষা, কৃষি ও স্বাস্থ্যসেবা সব ক্ষেত্রে এ এলাকার হাজারো মানুষের দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান ঘটবে।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুন নাহার বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। উপজেলা প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, সরেজমিনে দেখে ব্রিজ করার মতো উপযুক্ত জায়গা হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।