নানান সংকটে নুইয়ে পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানে রয়েছে চিকিৎসক-নার্স সংকট। নেই পর্যাপ্ত শয্যা ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। অবকাঠামোও জরাজীর্ণ। সব মিলিয়ে হাসপাতালটি নিজেই যেন অসুস্থ। চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। প্রতিদিন শত শত রোগী আসেন এখানে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৬ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত নাসিরনগর উপজেলা। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৭৪টি পদের বিপরীতে শূন্য রয়েছে ১১৪টি। বর্তমানে কাজ করছেন ৬০ জন, যার অনেকেই প্রেষণে আছেন। ২৩ চিকিৎসকের পদে কর্মরত আছেন আটজন। এর মধ্যে চারজন সংযুক্ত আছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে। একজন জ্যেষ্ঠ শিশু বিশেষজ্ঞ মাসে আসেন হাতে গোনা কয়েক দিন। তিনজন চিকিৎসকের ওপর ভর করছে জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ ও অন্তবিভাগ। ৫৫ স্বাস্থ্য সহকারীর ৪১টিই পদই শূন্য। ৩৬ জন সেবিকার স্থলে কর্মরত আছেন ১৪ জন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা জরুরি বিভাগে। অন্তর্বিভাগের অবস্থাও খুব ভালো নেই। ৫০ শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ভর্তি থাকছেন ১০০-১২০ রোগী। যা ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি। শয্যার অভাবে অনেকে মেঝেতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালের বারান্দায় থাকতে বাধ্য হচ্ছেন রোগী। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। পর্যাপ্ত ওষুধও মিলছে না।
জানা গেছে, জরুরি বিভাগে ওয়ার্ড বয় আমির হোসেন রোগীদের কাটা-ছেঁড়ার কাজ করেন। এ ছাড়া প্যারামেডিকেল চিকিৎসক অসিম কুমার প্যারালাইসিস আক্রান্ত। জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা গোকর্ণ ইউনিয়নের মনতাজ উদ্দিন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় পায়ে ব্যথা পেয়ে এসেছি কিন্তু যারা চিকিৎসা দেবেন তারাই অসুস্থ। একজন নাক-কান-গলার চিকিৎসা নিতে এসে জানতে পারেন এ বিষয়ে চিকিৎসক নেই ১৫ বছর ধরে। গোয়ালনগর গ্রাম থেকে আসা হালিমা বেগম শিশু বিশেষজ্ঞের অভাবে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যান। নছিমন বিবি নামে এক মা অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন হাসপাতালে। চিকিৎসক জানান, সিজার করতে হবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। এখানে অস্ত্রোপচার হয় না। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, বহির্বিভাগ, অন্তবিভাগ ও জরুরি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৬০০-৭০০ রোগী চিকিৎসা নেন। এত কম চিকিৎসক ও জনবল দিয়ে মানসম্মত চিকিৎসা দেওয়া কঠিন। জেলা সিভিল সার্জন ডা. নোমান মিয়া বলেন, জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৫ সালে ৩১ শয্যার হাসপাতালটি স্থাপন করা হয়। যা ২০০৭ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। অবকাঠামো ও জনবল এখনো ৩১ শয্যার পর্যায়ে রয়ে গেছে। স্ত্রীরোগ ও অ্যানেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞের অভাবে এক যুগ ধরে এখানে বন্ধ রয়েছে সিজারিয়ান অপারেশন। কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ধুলায় ঢেকে আছে, যা সময়ের সঙ্গে বিকল হয়ে যাচ্ছে।