শরীয়তপুরের নড়িয়া-জাজিরা-ঢাকা সড়কের কীর্তিনাশা নদীতে নির্মাণাধীন সেতুর কাজ আট বছরেও শেষ হয়নি। পুরোনো সেতুটিও ভেঙে ফেলায় ১১ মাস ধরে ওই পথে চলাচলকারীদের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় নদী পারাপার হতে হচ্ছে। অনেকে নদী পারাপারের ভয়ে ১৫ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ ঘুরছেন। এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী রাফেউল ইসলাম বলেন, ২০১৭ সালে যে ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয়েছিল তিনি কাজ শেষ না করেই চলে যান। কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন। এখন যারা কাজ করছেন তারাও এগোচ্ছেন ধীরগতিতে। তাদের তৎপর হতে পাঠানো হয়েছে তাগিদপত্র। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ এ পথে চলাচল করেন। নদীতে পানি বাড়লে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়বে। যারা ট্রলারে নদী পার হতে চান না তাদের ১৫ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ ঘুরে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করতে হয়। মোক্তারের চর এলাকার হৃদয় হোসেন ও সিফাত নড়িয়া সরকারি কলেজে পড়েন। তারা বলেন, ক্লাস ও প্রাইভেট পড়া মিলে দিনে ছয়-সাতবার উপজেলা সদরে আসা-যাওয়া করতে হয়। ছয় মাস ধরে নৌকায় নদী পারাপার হচ্ছেন তারা। বই-খাতা ভিজে যাওয়ার ভয় থাকে। বর্ষা মৌসুমে নদীতে স্রোত আরও বেড়ে যাবে। তখন দুর্ভোগ আর ঝুঁকি বাড়বে।
নড়িয়ার রাজনগর এলাকার লিয়াকত হোসেন বলেন, পুরোনো সেতুটি দিয়ে আমরা কোনোমতে যাতায়াত করতাম। নতুন সেতু নির্মাণ না করেই পুরোনোটি ভেঙে ফেলায় আমরা দুর্ভোগে পড়েছি। নৌকায় পারাপার হতে আমাদের ভয় লাগে। নিরুপায় হয়েই এটা করতে হচ্ছে।
শরীয়তপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, কীর্তিনাশা নদীর পূর্ব তীরে উপজেলা সদর এবং পশ্চিম তীরে মোক্তারের চর, রাজনগর, নশাসন ও জপসা ইউনিয়ন। এ ছাড়া জাজিরা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নও রয়েছে। নড়িয়া উপজেলা সদরের সঙ্গে সড়কপথে ওই ইউনিয়নগুলো এবং জাজিরার যোগাযোগের জন্য ১৯৯৭ সালে কীর্তিনাশা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করে এলজিইডি। ২০১০ সাল থেকে সেতুর আশপাশ থেকে অবৈধভাবে বালু তোলা ও ভাঙনের কারণে ঝুঁকিতে পড়ে। ২০১৫ সালে এটি ব্যবহারের অনুপযোগী ঘোষণা করে এলজিইডি। তখন থেকে ভারী যান চলাচল বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। ২০১৭ সালে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন সেতু নির্মাণের জন্য ‘নাভানা কনস্ট্রাকশন’ নামের প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় কার্যাদেশ। ওই প্রতিষ্ঠান কাজ শুরুর কয়েক মাস পর বন্ধ করে দেয়। ২০১৯ সালে নির্মাণকাজ ফেলে চলে যায় তারা। ২০২১ সালে ফের দরপত্র দেওয়া হয়। এ দফায় ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর কাজ পায় ‘কোহিনুর এন্টারপ্রাইজ’। ২০২৩ সালের ৯ জুন কাজের মেয়াদ শেষ হয় প্রতিষ্ঠানটির। তারা এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশ কাজ শেষ করেছেন। কোহিনুর এন্টারপ্রাইজের পক্ষে সেতুটির নির্মাণকাজ করছেন আবদুল ওয়াহাব মাদবর নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, নদীতে পাইলিং করতে সময় বেশি লেগেছে। তারা মেয়াদ বাড়ানোর চিঠি দেবেন।