পোনার সংকট, অবকাঠামো সংকট, রোগ নির্ণয়ে অপর্যাপ্ততা ও অসাধু ব্যবসায়ীর দৌরাত্ম্যসহ নানা কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে চিংড়ি চাষ ক্রমেই কমছে। এতে টেকসই উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সেই সঙ্গে চিংড়ি রপ্তানিতে নতুন বাজার তৈরি না হওয়া, উচ্চমূল্যে ব্যাংক সুদের হার, লজিস্টিক সহায়তার অভাব, স্থানীয় ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা ও চিংড়ি পরিবহন সংকটে রপ্তানিতে প্রভাব পড়ছে। মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা লিপ্টন সরদার খুলনাঞ্চলে চিংড়ি চাষে এ ধরনের ১১টি প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করেছেন। জানা যায়, বটিয়াঘাটা হোগলবুনিয়ার বাগদা চাষি ইকরামুল ইসলাম গত এপ্রিলে তার ঘেরে ১২ লাখ পোনা ছাড়েন। কিন্তু দুই মাস বয়সে জুলাইতে প্রায় ৪ লাখ পোনা মারা যায়। ভাইরাসের কারণে তার মতো হোগলবুনিয়া, খলসিবুনিয়া, পাশখালি, কাচারিবাড়ি ও শৈলমারী এলাকার প্রায় ছয় শ চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান বলেন, ‘চিংড়িতে মোটা দাগে সমস্যা হচ্ছে দুর্বল অবকাঠামো ও মানসম্পন্ন পোনার অভাব। চিংড়ি খামারে গভীরতা কম ও যেসব খাল নিয়ে ঘেরে পানি সরবরাহ করা হয় তাও নাজুক অবস্থায় রয়েছে।’
মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে খুলনার ৯টি উপজেলায় মিঠা ও লবণাক্ত পানিতে চিংড়ি ঘের ছিল ৫৬ হাজার ১৮৬ হেক্টর জমিতে। চিংড়ি উৎপাদন হয় ২৭ হাজার ১৭৪ মেট্রিক টন। পাঁচ বছরের ব্যবধানে চিংড়ি ঘের কমেছে ৪ হাজার ৭৮৬ হেক্টর। আর চিংড়ির উৎপাদন কমেছে ৩ হাজার ৭৫২ মেট্রিক টন।
এদিকে চিংড়ির উৎপাদন কমে যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে রপ্তানিতেও। ২০২১-২২ অর্থবছরে খুলনাঞ্চল থেকে চিংড়ি রপ্তানি হয় প্রায় ২৫ হাজার মেট্রিক টন। সেখানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কমে হয়েছে ১৫ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন। যা ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় সাড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন চিংড়ি রপ্তানি কম। চিংড়ি রপ্তানিকারক এস হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে ভোক্তা তৈরি হওয়ায় উৎপাদিত চিংড়ির অর্ধেকই চলে যায় স্থানীয় বাজারগুলোতে। ফলে রপ্তানি কোম্পানিগুলো কাঁচামাল সংকটে রয়েছে। নানা সীমাবদ্ধতায় ভেনামি চাষেও উদ্যোক্তারা সফল হয়নি। হ্যাচারি থেকে সরবরাহকৃত পোনা ৩০-৩২ দিনের মধ্যে মারা যাচ্ছে। চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। খুলনা মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ দপ্তরের কর্মকর্তা লিপ্টন সরদার বলেন, ‘রপ্তানিকারকদের কৃষির মতো বিদ্যুতে ভর্তুকি, লজিস্টিক সহায়তা ও চিংড়ির জন্য মেগা প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।’