রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও শাহজাহানপুর থানায় দায়ের করা ছিনতাইয়ের মামলাগুলো দ্রুত পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করার জন্য সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার্স ইনচার্জকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইন স্বপ্রণোদিত হয়ে এ নির্দেশ দেন। এসব থানায় দায়ের করা ছিনতাইয়ের মামলাগুলোর পুলিশ প্রতিবেদন দ্রুত দাখিল করা হচ্ছে না।
বিচারক আদেশে উল্লেখ করেন, আমি জিআর আমলী আদালত ও জিআর মামলার জামিন শুনানিকালে দেখেছি যে, ঢাকার প্রায় সকল থানা এবং আমার নিয়মিত দায়িত্বপ্রাপ্ত জিআর আমলী মতিঝিল, পল্টন, শাহজাহানপুর থানায় বর্তমানে তদন্তাধীন দ্যা পেনাল কোড ১৮৬০ এর ৩৯২, ৩৯৩, ৩৯৪ ধারা সমূহের দায়েরকৃত ছিনতাইয়ের মামলা পুলিশ প্রতিবেদন দ্রুত দাখিল করা হচ্ছে না।
ঢাকার বেশিরভাগ থানায় বর্তমানে তদন্তাধীন ছিনতাইয়ের মামলা ৩-৬ মাস ধরে তদন্তাধীন থাকার পরও অনেক মামলায় পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করা হচ্ছে না।
বিচারক আদেশ বলেন, ঢাকার সিএমএম আদালতে আমার অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা যাচ্ছে যে, ছিনতাই প্রতিরোধে পুলিশের নিয়মিত উদ্যোগের পাশাপাশি দ্রুত ন্যায় বিচার নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে দ্রুত পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করা আবশ্যক। যে সকল মামলায় আসামিগণ হাতেনাতে গ্রেফতার ও আলামত উদ্ধার আছে এবং কোন পলাতক আসামি নেই, এমন সব মামলায় ১৫ দিনের মধ্যে পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করা সম্ভব। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, অধিকাংশ মামলায় ৩-৫ মাসের মধ্যেও পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করা হচ্ছে না। ইতোঃপূর্বে বিভিন্ন মামলায় আদেশের কপি দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন থানার অফিসার ইনচার্জকে লিখিতভাবে পুলিশ রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ প্রদান করা হয়।
ব্যক্তিগতভাবে জিআরও অফিসের মাধ্যমে বিভিন্ন থানার অফিসার ইনচার্জগণ ও তদন্তকারী কর্মকর্তাগণকে পুলিশ রিপোর্ট দ্রুত দাখিলের নির্দেশ প্রদান করা হলেও উক্ত নির্দেশনা সঠিকভাবে প্রতিপালন করা হচ্ছে না মর্মে প্রতীয়মান হয়।
সম্প্রতি ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ১৭৩বি ধারা সংযুক্তক্রমে ৬০ কার্য দিবসের মধ্যে পুলিশ রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
ইতোঃপূর্বে তদন্তের সময়সীমা ১২০ কার্য দিবস ছিল। জামিন শুনানিকালে প্রায়ই ছিনতাইয়ের মামলায় আসামির হাজতবাস ৫-৭ মাস হাওয়ার পরও দেখা যায়, পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করা হয়নি এবং তদন্ত বিলম্বের বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট থেকে কোন প্রতিবেদন বা লিখিত ব্যাখ্যা দাখিল করা হয় না।
এর ফলে ছিনতাইয়ের মামলায় হাজতী আসামিরা জামিন পাওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হয়। এছাড়া বিলম্বে পুলিশ রিপোর্ট দাখিলের ফলে মামলা বিচারের জন্য গ্রহণ ও নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা হয়।
বিচারক আদেশে আরো বলেন, ছিনতাইয়ের মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামির ক্ষেত্রে কোন সতর্কতা বা পর্যান্ত কারণ উল্লেখ করা ব্যতীত অনেক আসামিকে অজ্ঞাতনামা তদন্তে প্রাপ্ত আসামি হিসেবে মামলায় ফরওয়ার্ড করা হয়। এর ফলে উক্ত আসামিগণ পর্যাপ্ত বা গ্রহণযোগ্য হাজতবাস শেষে অনেক সময় জামিন লাভ করেন। তাই অজ্ঞাতনামা আসামির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কারণ ও তদন্তেপ্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উল্লেখ করা আবশ্যক।
উপর্যুক্ত প্রেক্ষিতে ছিনতাইয়ের মামলা দ্রুত পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করার জন্য অফিসার ইনচার্জ মতিঝিল, পল্টন ও শাহজাহানপুর থানাকে নির্দেশ প্রদান করা হলো।
সূত্র : বাসস।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত