নতুন একটি সংবিধান সংশোধন বিল পার্লামেন্টে উত্থাপন করতে যাচ্ছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। প্রস্তাবিত বিল অনুযায়ী, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা যদি কোনও গুরুতর অভিযোগে গ্রেফতার বা আট হয়ে টানা ৩০ দিন কারাগারে থাকেন, তাহলে তারা আর পদে থাকতে পারবেন না। তাদের পদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হবে।
বিলটি আগামী সোমবার পার্লামেন্টে উত্থাপন করা হবে এবং পরবর্তীতে পার্লামেন্টারি কমিটির কাছে পাঠানো হতে পারে। খসড়া বিলে সংবিধানের ২৩৯এএ অনুচ্ছেদে সংশোধন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে কারাদণ্ডের কারণে মন্ত্রীদের পদ চলে যায়।
বিলে বলা হয়েছে, কোনও মুখ্যমন্ত্রী যদি গুরুতর অভিযোগে গ্রেফতার হন এবং টানা ৩০ দিন জেলে থাকেন, তাহলে তার পদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে যাবে। একই নিয়ম প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও রাজ্য সরকারের মন্ত্রীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। তবে যে অপরাধের জন্য তাদের আটক করা হয়েছে, তার শাস্তি পাঁচ বছর বা তার বেশি হতে হবে।
একইভাবে অভিযুক্ত জনপ্রতিনিধি দোষী সাব্যস্ত না হলেও তাদের পদ থেকে অপসারণ করা যেতে পারে, যেমনভাবে সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারের পর সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
এর ফলে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন (পিএমএলএ) নতুন করে আলোচনায় এসেছে। কেননা সাম্প্রতিক অতীতে বেশ কয়েকজন বিরোধীনেতাকে গ্রেফতারের জন্য ইনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) ব্যবহার করেছে। পিএমএলএ’র অধীনে ইডি কাউকে গ্রেফতার করতে পারে এবং ৩০ দিনের জন্য জামিন নাকচ করতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে প্রস্তাবিত আইনের অধীনে গ্রেফতার হওয়া কোনও মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রী ৩০ দিনের সীমা অতিক্রম করার পরে তার পদ হারাবেন। এটিই বিরোধীদের মধ্যে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপাল প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রীদের হেফাজত থেকে মুক্তি পাওয়ার পর পুনরায় তাদের বহাল করতে পারবেন।
পৃথক আইনি কাঠামো দ্বারা পরিচালিত হলেও জম্মু ও কাশ্মীর এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোতেও একই বিধান প্রযোজ্য হবে।
বর্তমানে, গ্রেফতারের পর মন্ত্রীদের তাদের পদ বহাল রাখার উপর কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই।
জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে দুই বছর বা তার বেশি সাজাপ্রাপ্ত অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে বিধায়ক এবং সাংসদদের অযোগ্য ঘোষণার বিধান রয়েছে।
ভারতের ইতিহাসে সাধারণত মুখ্যমন্ত্রীরা কোনও অভিযোগে অভিযুক্ত হলে পদত্যাগ করেন। উদাহরণ হিসেবে লালু প্রসাদ যাদব, হেমন্ত সোরেন ও জয়ললিতা উল্লেখযোগ্য। তবে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে আবগারি কেলেঙ্কারি মামলায় অভিযুক্ত অরবিন্দ কেজরিওয়াল পদত্যাগ না করে ছয় মাস মুখ্যমন্ত্রী পদে ছিলেন। তবে, প্রধানমন্ত্রী পদে থেকে কেউ জেলে যাননি।
বিরোধী দলগুলো এই বিলকে কেন্দ্র করে তাদের কর্মপন্থা নির্ধারণ করবে। কংগ্রেসের রাজ্যসভা সদস্য অভিষেক মণু সিংভি সামাজিক মাধ্যমে বলেছেন, “বিরোধী নেতাদের সহজেই গ্রেফতার করা যায় এবং ক্ষমতাসীন দলের মুখ্যমন্ত্রীরা কখনও গ্রেফতার হবেন না।” এই আইনের মাধ্যমে বিরোধী দল দমন আরও সহজ হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এই বিল কার্যকর হলে ভারতের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগে জেল সাজা থাকলে পদ হারানোর নিয়ম কার্যকর হবে, যা রাজনৈতিক জবাবদিহিতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে
বিডি প্রতিদিন/একেএ