আসন্ন অর্থবছরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফের চালু করা হচ্ছে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি। আগামী অর্থবছরে এমপিওভুক্ত হবে ইবতেদায়ি মাদরাসা। এর জন্য অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। গতকাল বাজেট বক্তৃতায় এসব তথ্য জানান অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাতে বরাদ্দ অল্প পরিমাণে বৃদ্ধি পেলেও বড় পরিসরে বরাদ্দ বেড়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং কারিগরি ও মাদরাসাশিক্ষায়।
প্রস্তাবিত বাজেটে দেখা গেছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩৫ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ ছিল ৩৫ হাজার ১২৩ কোটি টাকা। সে হিসেবে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বাজেট বেড়েছে ২৮০ কোটি টাকা। যদিও গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ খাতে প্রস্তাবিত বরাদ্দ ছিল ৩৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এই বরাদ্দ কমে যায়।
প্রাথমিক স্কুল ফিডিং কর্মসূচিতে এবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা। এ কর্মসূচির আওতায় শিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে, যা বিদ্যালয়ে ভর্তির হার বাড়াবে এবং ঝরে পড়ার হার কমাবে। বর্তমানে প্রাথমিক স্তরের সব শিক্ষার্থীকে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতি এবং শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণে সহায়ক ভূমিকা রাখছে বলে বাজেট বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়।
কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলা এবং নোয়াখালীর ভাসানচরে প্রি-প্রাইমারি ও প্রাইমারি এডুকেশন ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পে আসন্ন অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪১১ কোটি টাকা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪৫০ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে এবার বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ৪৭ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৪৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা। সে হিসেবে এ খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ৯৩৪ কোটি টাকা।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, উচ্চশিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী, আধুনিক ও বিশ্বমানে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক মানের আউটকাম বেজড এডুকেশন পদ্ধতিতে কারিকুলাম হালনাগাদ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বোনাস বৃদ্ধি, গ্র্যাচুইটি প্রদানসহ সব স্তরের শিক্ষকদের মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে। কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য আসন্ন অর্থবছরে ১২ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। গত অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। সে হিসেবে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষায় ৮৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। ইবতেদায়ী পর্যায়ে বৃত্তি প্রদান এবং মাদরাসাগুলো এমপিওভুক্তি বাবদ ৭২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকরা এমপিওভুক্তি দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন। সম্প্রতি এই শিক্ষকরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আন্দোলন শুরু করলে এমপিওভুক্তির আশ্বাস পেয়ে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছিলেন। এই মাদরাসাগুলোকে এবার এমপিওভুক্তির আওতায় নিতে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।