‘এখন হয়তো মেয়েরা অনেক বেশি বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারছে, কারণ এখন মেয়েরা অনেক বেশি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা পাচ্ছে। আর এই না যে শুধু আমিই আছি, ওর বাবাও অনেকটা আইরার সঙ্গে রয়েছে; সেদিক থেকে আইরা বাবার ভালোবাসাও মিস করেনি। এখনো আমরা কো-প্যারেন্টিং করে যাচ্ছি’
দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী রাফিয়াত রশীদ মিথিলা। অভিনয়ের বাইরে একাধারে তিনি একজন জনপ্রিয় মডেল, গায়িকা এবং উন্নয়নকর্মী। মিথিলা একাডেমিক ক্যারিয়ারের কারণেও বেশ সুপরিচিত। তিনি লেখালেখিসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বেশ সক্রিয়। আর উন্নয়নকর্মী হিসেবে ফুলটাইম চাকরি করেন। বর্তমানে তিনি ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্টের প্রধান হিসেবে কর্মরত। দেশের ব্যস্ততা শেষে তিনি পেশার কারণে এখন অবস্থান করছেন পূর্ব আফ্রিকার সবচেয়ে বড় দেশ তানজানিয়ায়। সর্বশেষ মিথিলা শিহাব শাহীনের নির্মাণে একটি টিভিসিতে কাজ করেন। গত ঈদে একই নির্মাতার ‘অ্যালেন স্বপন টু’ মুক্তি পেয়েছিল। যেখানে মিথিলার উপস্থিতি ছিল সপ্রতিভ। মাঝে তিনি দীপ্ত টিভির ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ শো-এর একজন অন্যতম বিচারক হিসেবে যুক্ত ছিলেন। এ ছাড়াও জনপ্রিয় কোরিয়ান ড্রামা ‘ডিসেনডেন্টস অয দ্য সান’ সিরিজের বাংলা ডাবিংয়ে কণ্ঠও দিয়েছেন মিথিলা। এদিকে দুই বাংলায় তার সব কাজ মুক্তিও পেয়েছে। তাই সিনেমা-ওয়েব সিরিজ নিয়ে আপাতত ব্যস্ততা নেই তার। ওপারে ‘মন্টু পাইলট’-এর সিক্যুয়ালেও মিথিলা নেই বলে জানা গেছে। অভিনয় নিয়ে কেন বড় কোনো পরিকল্পনা করতে পারেন না। সে প্রসঙ্গে মিথিলা বলেন, ‘অনেকেই জানেন আমি একজন উন্নয়নকর্মী। এটা আমার ফুলটাইম চাকরি। সেখানে আমাকে বেশি সময় দিতে হয়। পাশাপাশি অভিনয় করি। তাই অভিনয় নিয়ে বড় কোনো পরিকল্পনা করতে পারি না।’ তবে শোবিজে কম-বেশি কাজ নিয়ে থাকলেও মিথিলার নিজের জগতে এ মুহূর্তে আছে মেয়ে আইরা। বিশ্বের কোটি অধিকারবঞ্চিত শিশু, সংগীত এবং জ্ঞানচর্চা।
যদিও তাহসানের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর মিথিলা মেয়ের কারণে বন্ধুত্ব বজায় রেখেছেন। মাঝে তাহসান-মিথিলা একসঙ্গে কাজও করেছেন। তবে তাহসানের সঙ্গে ডিভোর্সের কিছু দিনের মধ্যে মিথিলা বিয়ে করেন সৃজিতকে।
তবে সৃজিতের সঙ্গে মিথিলার বর্তমান সম্পর্কটাও ভালো যাচ্ছে না বলে জানা যায়। আগে ঢাকা-কলকাতা যাওয়া-আসার মধ্যে থাকলেও ইদানীং কলকাতা তেমন যাচ্ছেন না। এর কারণ হিসেবে সামনে আসে সৃজিতের নতুন সম্পর্ক (পরকীয়া)। সম্প্রতি টালিউডের অন্দরে ভেসে বেড়াচ্ছে সৃজিত মুখার্জি-সুস্মিতা চ্যাটার্জির প্রেমের গুঞ্জন। সেই গুঞ্জন আরও জোরালো হয়েছে তাদের দুজনের বিশেষ পার্টিতে অংশ নেওয়ার পর। এর আগেও তাদের দেখা গেছে বিশেষ মুহূর্তে। যদিও ৃসৃজিতকে নিয়ে এমন আলোচনা এই প্রথম নয়; অতীতেও তার সঙ্গে নাম জড়িয়েছে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, ঋতাভরী চক্রবর্তীসহ একাধিক নায়িকার। তাই বলা চলে, স্ত্রী মিথিলার সঙ্গে সৃজিতের সম্পর্কের অবনতির গুঞ্জন আগে থেকেই ছিল।
অন্যদিকে যে বাড়িতে মিথিলা-সৃজিতের বসবাস, সেই বাড়িতে সৃজিতের নিয়মিতভাবে একের পর এক সাপ এনে তোলা তাদের মধ্যে দূরত্বের অন্যতম কারণও হতে পারে। একজন সর্পপ্রেমী অন্যজনের সর্পে ভীতি। তাই গুঞ্জন ওঠে, সৃজিতের ঘরে সাপ থাকবে, নাকি মিথিলা! শুরুতে একটা পাইথন থাকলেও এখন তা এসে চারটিতে দাঁড়িয়েছে। মিথিলা তাই সর্বদা ভয়ে থাকতেন। সেই ভয়ের কথা একসময় প্রকাশ্যেও বলেছেন, ‘তিনি নাকি সাপের ভয়ে বাড়িতে ঢুকতে পারছেন না।’ তবে সৃজিত-মিথিলার সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন থাকলেও, এ ধরনের জল্পনা অমূলক বলেই এর আগে স্পষ্ট করেছেন সৃজিত। অন্যদিকে মাঝে সৃজিতের অসুস্থতার সময় হাসপাতালে মিথিলার দ্রুত ছুটে যাওয়া, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও দায়িত্বশীলতা অন্যরকম আভাস দেয়।
এদিকে বেশ কয়েক বছর একা ছিলেন জনপ্রিয় গায়ক-অভিনেতা তাহসান। দীর্ঘদিন ধরে মেয়েকে নিয়েও বেশ সময় কাটাচ্ছিলেন। কিন্তু না, এখন তিনি পুনর্বিবাহিত। বউ রোজাকে নিয়ে সুখের সাগরে ভাসছেন। হানিমুনে সুন্দর মুহূর্ত ফ্রেমবন্দি করছেন। তাই তাহসান বিয়ে করতেই ফের আলোচনা এবং সমালোচনায় আসে সৃজিতপত্নী মিথিলা। শুধু তাই নয়, তাহসান-মিথিলা সম্পর্ক নিয়ে নানা কথা শুনতে হচ্ছে এখনো। যদিও মিথিলার এসব শোনার সময় নেই। বরং তিনি বেজায় ব্যস্ত নিজের কাজ ও মেয়ে আইরাকে নিয়ে।
তবে তাহসান থেকেও বেশি প্রসঙ্গ উঠেছে মিথিলাকে নিয়ে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি একটি পডকাস্ট অনুষ্ঠানে মিথিলা তাঁর প্রাক্তন স্বামী তাহসানের সঙ্গে বিচ্ছেদ-পরবর্তী জীবন নিয়ে কথা বলেছেন। এ ছাড়া, তিনি তাঁর মেয়ে আয়রাকে নিয়ে তাহসানের সঙ্গে যৌথভাবে দেখাশোনা করছেন বলেও জানিয়েছেন। তাহসান-মিথিলা তাদের ১১ বছরের সংসার জীবনের ইতি টানেন ২০১৭ সালে। বিচ্ছেদের পর মিথিলা কেমন করে দিনগুলো অতিবাহিত করেছেন তা আট বছর পর সেই অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন। মিথিলা বলেন, ‘যে কোনো বিচ্ছেদ বা যে কোনো সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া সহজ নয়, খুবই কঠিন। বন্ধু বা এটা যে কোনো ক্ষেত্রে হতে পারে। আমি ছিলাম তখন অনেক অল্পবয়সি এবং তরুণী মা। আমি যে কোনো একটা ভালো-মন্দ বিচার করব বা কোনো একটা সিদ্ধান্তে আসব, সেটার শক্তিই আমার ছিল না। কারণ আমার একটা এক বছরের বাচ্চা। আমার মানসিক অবস্থা ভালো ছিল না, যেখানে আমি কোনো একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারব নিজের জীবনের। ২০১৭ সালে এসে সিদ্ধান্ত নিতে পারলাম, আমাদের মনে হয় এ সম্পর্কটা আসলেই কাজ করবে না। এখন হয়তো মেয়েরা অনেক বেশি বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারছে, কারণ এখন মেয়েরা অনেক বেশি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা পাচ্ছে। আর এই না যে শুধু আমিই আছি, ওর বাবাও অনেকটাই আইরার সঙ্গে রয়েছে; সেদিক থেকে আইরা বাবার ভালোবাসা মিস করেনি। এখনো আমরা কো-প্যারেন্টিং করে যাচ্ছি।’ কলকাতায় শ্বশুরবাড়ি, তবু মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় থাকতেই পছন্দ মিথিলার। মেয়ের জন্যই এ সিদ্ধান্ত তাঁর, জানিয়েছিলেন মিথিলা নিজেই। মিথিলা তাই বলেছেন, বিচ্ছেদ হয়ে গেলেও মেয়ের স্বার্থে তাহসানের সঙ্গে বন্ধুত্ব রয়েছে।