অবশেষে ধুঁকতে থাকা চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ উদ্যোগ নিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ জন্য চট্টগ্রাম নগর এবং উপজেলায় পাহাড়-টিলায় অবৈধভাবে দখলদারদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ জন্য চট্টগ্রাম নগরের ছয়টি এবং ১৫ উপজেলার সহকারী কমিশনারদের (ভূমি) চিঠিও দেওয়া হয়েছে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি এ চিঠি আসে মন্ত্রণালয় থেকে। তালিকা তৈরির পর অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রশাসন অ্যাকশনে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া আছে। মূলত ১১ ফেব্রুয়ারি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ‘পাহাড়-টিলায় অবৈধভাবে দখলদারদের তালিকা প্রেরণ’ শীর্ষক একটি চিঠি আসে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নগরীতে গত ৩০ বছর আগে পাহাড় ছিল প্রায় ২০০টি। ইতোমধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে ১২০টি। বর্তমানে ৮০টির মতো পাহাড় কোনো রকম টিকে আছে। কিন্তু এগুলোতেও প্রতিনিয়তই পড়ছে কোদালের কোপ। ফলে বিদ্যমান পাহাড়গুলো এখন হুমকির মুখে। জানা যায়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের পাহাড়-টিলা রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে। এরই অংশ হিসেবে অবৈধভাবে পাহাড়-টিলা দখলদারদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করে। মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের পাহাড়-টিলাসমৃদ্ধ এলাকাগুলোয় অনিয়ন্ত্রিতভাবে পাহাড়-টিলা কর্তন, গাছপালা কেটে ফেলা, অবৈধভাবে পাহাড়ে বসতি স্থাপন ইত্যাদি কারণে পাহাড়ের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং পাহাড়ধস, বন্যা, জলাবদ্ধতা পরিবেশ দূষণ জীববৈচিত্র্য হ্রাস, ভূমিক্ষয়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটছে।’ এমন অবস্থায় পাহাড় রক্ষায় অবৈধ দখলদারদের তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসচিব সাদি উর রহিম জাদিদ বলেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠির নির্দেশনা মতে নগরের ৬টি ও ১৫ উপজেলার সহকারী কমিশনারদের (ভূমি) কাছে পাহাড়-টিলার অবৈধ দখলদারদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। তালিকা এলে সেটি মন্ত্রণালয় এবং পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে পাঠানো হবে। এরপর সরকারি নির্দেশনা মতে প্রয়োজনীয় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরে সরকারি-বেসরকারি মালিকানাধীন ঝুঁকিপূর্ণ মোট ২৬টি পাহাড় আছে। এসব পাহাড়ে বাস করে ৬ হাজার ৫৫৮টি পরিবার। ২৬ পাহাড়ের মধ্যে ১৬টি সরকারি সংস্থার ও ১০টি ব্যক্তিমালিকানাধীন। পাহাড়গুলো তদারকিতে আছে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি। ২০০৭ সালের জুন মাসে গঠিত এ কমিটি গত ১৭ বছরে ২৯টি সভা করেছে। প্রতিটি সভায় ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে অবৈধ বসবাসকারীদের উচ্ছেদ, গ্যাস-বিদ্যুৎ ও ওয়াসার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এসব সিদ্ধান্ত আলোর মুখ দেখে না। তাছাড়া সেবা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে বিষয়টা নিয়ে অবহেলা করার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরে নিয়মিতই কাটা হয় পাহাড়। ফলে প্রতিনিয়তই পাহাড়শূন্য হতে চলেছে কিছু এলাকা। এখানে নির্মিত হচ্ছে আবাসন প্রতিষ্ঠানের বহুতল ভবন এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান। নগরের ষোলোশহর, ফয়েস লেক, আকবর শাহ, আকবর শাহ লেক সিটি আবাসিক, আকবর শাহ ঝিল এলাকা, বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন কৃষ্ণছায়া আবাসিক, ওয়্যারলেস কলোনির পাহাড়, জালালাবাদ হাউজিং, গ্রিনভ্যালি হাউজিং, বায়েজিদ শেরশাহ, চন্দ্রনগর, লালখান বাজার, মতিঝর্ণা, পাহাড়তলী, পলিটেকনিক, কুসুমবাগ, কাইচ্যাঘোনা, উত্তর পাহাড়তলীর বিশ্ব কলোনি, মক্কীঘোনা, বাটালি হিল, প্রবর্তক পাহাড়, জয়পাহাড়, রেলওয়ে এম্পøয়িজ গার্লস স্কুল এলাকা, আমবাগান, আরেফিন নগর এলাকায় বেশি পাহাড় কাটা হয়।