স্যামসন এইচ চৌধুরী শুধু একজন শিল্পোদ্যোক্তাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন স্বপ্নদ্রষ্টা, একজন পথিকৃত। নীতি, নৈতিকতা, সততা এবং সাহসকে নিজের আদর্শ হিসেবে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি আঁকড়ে ধরে ছিলেন। একদিনের জন্যও আপস করেননি। কোনো ধরনের নিয়ম বহির্ভূত উপায় অবলম্বন না করেই যে ব্যবসা খাতে এত বড় এক মহীরূহ হওয়া সম্ভব, এটি তার জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পরও তার শিল্পগোষ্ঠী, স্কয়ার গ্রুপের নেওয়া প্রতিটি পদক্ষেপের মাধ্যমেই তিনি প্রমাণ করে গেছেন।
স্কয়ার গ্রুপের প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরীর শততম জন্মদিনে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় এভাবেই তার স্মৃতিচারণা করেন পরিবারের সদস্যবর্গ, সহকর্মী, শুভানুধ্যায়ী, চার্চের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ-সহ দেশের বিশিষ্টজন, শীর্ষ ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এবং স্কয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালকবৃন্দ এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থিত সেন্ট মেরি’স ক্যাথেড্রালে সহস্রাধিক অতিথির উপস্থিতিতে এ সভার আয়োজন করা হয়।
স্মরণসভায় বক্তারা তার বর্ণাঢ্য জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। সভার শুরুতে প্রার্থনা পর্বে স্যামসন এইচ চৌধুরীর জীবনকে উৎসর্গ করে খ্রিস্টীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এ পর্বে পবিত্র বাইবেল পাঠ এবং স্যামসন এইচ চৌধুরীর পরিবারের জন্য বিশেষ প্রার্থনা উৎসর্গ করা হয়। ধর্মীয় বাক্য প্রচারের মাধ্যমে নিজের স্নেহাশীষ জানান কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও, সিএসসি।
স্মৃতিচারণ পর্বে বক্তব্য প্রদানকালে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর আব্দুল মুক্তাদির বলেন, ‘জীবনের পড়ন্ত বেলায়ও তিনি যতটা জীবন শক্তিতে ভরপুর ছিলেন, যতটা কর্মতৎপর ছিলেন, তা ছিল অনুকরণীয়। তার নেতৃত্বেই আমরা ওষুধ শিল্পকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাই।’
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ড. ইফতেখারুজ্জামান তার বক্তব্যে বলেন, ‘তার অনুপ্রেরণায়, তার গাইডেন্সে আমরা টিআইবিতে কাজ করতাম। তিনি সবসময় বলতেন, আমাদের কাজে চ্যালেঞ্জ আসবে। কিন্তু হাল ছেড়ে দেয়া যাবে না।’
স্মরণসভায় আরও স্মৃতিচারণ করেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশ’র (আইসিসিবি) প্রেসিডেন্ট মি. মাহবুবুর রহমান, চার্চ লিডার, সমাজ সেবক ও লেখক ড. ডেনিস দিলীপ দত্ত এবং শিক্ষাবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দীন তার বক্তব্যে বলেন, ‘তিনি ছিলেন একজন অর্থনৈতিক দার্শনিক। নীতি-নির্ধারণী বিভিন্ন বিষয়ে তার সাথে আমি দীর্ঘ আলোচনা করে উপকৃত হয়েছি।’
সভায় পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন স্যামসন এইচ চৌধুরীর পৌত্রী সাঞ্চিয়া চৌধুরী। সমাপনী বক্তব্যে পরিবারের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তার দ্বিতীয় পুত্র এবং স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘একজন কিংবদন্তি শিল্পপতি হওয়ার আগে তিনি ছিলেন আদর্শ একজন মানুষ। তাকে আপনারা অনেকেই একজন আদর্শ মানুষ হিসেবেই চেনেন। যিনি নিজের সততা, নৈতিকতা, ন্যায়পরায়ণতা এবং দানশীলতার সাথে কখনো আপস করেননি। তার বন্ধু, নিকটজন বা গুণগ্রাহী হিসেবে আমাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে আজ যারা এই শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন তাদের প্রতি আমাদের পরিবারের সদস্য-সদস্যাদের পক্ষ থেকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।’
সভায় স্যামসন এইচ চৌধুরীর বর্ণাঢ্য জীবন নিয়ে একটি ভিডিও, একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি ভিডিও এবং তার জন্মশতবর্ষে স্কয়ার গ্রুপের পক্ষ থেকে গৃহীত মোবাইল স্বাস্থ্যসেবা উদ্যোগ ‘৫৬ হাজার স্কয়ার মাইল জুড়ে’ নিয়ে একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। সভায় গান পরিবেশন করেন জনপ্রিয় রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী শামা রহমান এবং প্রার্থনা সংগীত পরিবেশন করে গেৎশিমানি ব্যাপ্টিস্ট চার্চ কয়ার।
বিডি প্রতিদিন/এমআই