বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে নিয়োগ পরীক্ষায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ১১ দফা দাবি জানিয়েছে চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে ‘পিএসসি সংস্কার আন্দোলন’ ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবিগুলো তুলে ধরা হয়।
চাকরিপ্রত্যাশীরা বলেন, গত জুলাই মাসে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যে গণআন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, তার অন্যতম কারণ ছিল সরকারি চাকরিতে মেধাভিত্তিক এবং স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার অভাব। এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো সেই সমস্যাগুলোর কোনো স্থায়ী সমাধান আসেনি। ফলে তারা আবারও আন্দোলনে নেমেছেন।
তারা বলেন, ‘আমরা চাকরি চাই—যোগ্যতার ভিত্তিতে। পিএসসিকে নিরপেক্ষ ও জবাবদিহিমূলক করতে হলে সংস্কার জরুরি। আমরা ১১ দফা দাবি জানিয়েছি। এর বাস্তবায়ন হলে চাকরির প্রক্রিয়ায় মানুষ আস্থা পাবে।’
চাকরি প্রত্যাশীদের উত্থাপিত ১১ দফা দাবি
১. ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল অসঙ্গতিপূর্ণ হওয়ায় তা সংশোধন করে পুনরায় প্রকাশ করতে হবে।
২. ৪৮তম বিশেষ বিসিএস (স্বাস্থ্য) যৌক্তিক সময়ে পুনঃনির্ধারণ করতে হবে। চিকিৎসকদের প্রার্থীতার জন্য বয়সসীমা ৩৪ বছর করতে হবে। ৪৭তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার জন্য ন্যূনতম ৪ মাস সময় দিতে হবে।
৩. ৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসে জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং ৪৬তম বিসিএস বাতিলের সম্ভাবনা নেই—এমন নিশ্চয়তা দিতে হবে।
৪. ‘নন ক্যাডার বিধি-২০২৩’ সংশোধন (প্রয়োজন সাপেক্ষে বাতিল) করে মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সকলের চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. ৪৫তম বিসিএস থেকে মৌখিক পরীক্ষার নম্বর ১০০ করতে হবে। পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষার খাতা পুনঃনিরীক্ষার সুযোগ দিতে হবে এবং এই নিয়ম স্থায়ীভাবে চালু রাখতে হবে।
৬. কমিশনকে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও আস্থাশীল রাখতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।
৭. মৌখিক পরীক্ষার পূর্বে অনলাইনে পুনরায় ক্যাডার পছন্দক্রম করার সুযোগ দিতে হবে।
৮. স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার নম্বর ফলাফল প্রকাশের সময়, এবং লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার নম্বর চূড়ান্ত ফলাফলের সময় প্রকাশ করতে হবে।
৯. ফৌজদারি মামলা বা রাষ্ট্রদ্রোহিতায় দণ্ডিত হওয়ার সুস্পষ্ট অভিযোগ ছাড়া চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত কোনো প্রার্থীর গেজেট প্রকাশে বাধা দেওয়া যাবে না।
১০. কমিশনে সদস্য নিয়োগে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে বিশেষজ্ঞ মহলের পরামর্শে পদক্ষেপ নিতে হবে।
১১. লিখিত খাতার মূল্যায়নে গতিময়তা, নিরাপত্তা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে কমিশনে বসেই খাতা দেখার ব্যবস্থা করতে হবে।
চাকরি প্রত্যাশীরা সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, এই সময়ের মধ্যে দাবি বাস্তবায়নের উদ্যোগ না নিলে তারা সর্বাত্মক কর্মসূচিতে যাবেন এবং আন্দোলন আরও বিস্তৃত ও তীব্র হবে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ