ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের শিক্ষক নিয়োগ, পতিত 'ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের' পৃষ্ঠপোষকতা করাসহ একাধিক অভিযোগ তুলেছে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দল'। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংশোধনের জন্য সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে সংগঠনটি। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন এবং উচ্চপর্যায়ে অভিযোগ করবেন বলে জানান তারা।
এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অধ্যাপক মামুন আহমেদ। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছভাবে ও প্রশাসনিক নিয়ম মেনে হয়েছে বলে জানান তিনি। ২২ জুন (রবিবার) অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রো-ভিসি কার্যালয়ে ২ ঘণ্টার অধিক সময় বৈঠকে জবাবদিহি চান তারা। এসময় ড. মামুনের সাথে সাদা দলের একাধিক শিক্ষকের বাকবিতণ্ডা হয়।
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে সাদা দলের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ ছাত্রলীগপন্থী বিতর্কিত নেতা-কর্মীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাদিয়া আফরিন এনিকে পপুলেশন সায়েন্স বিভাগে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়া, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের নকল করে ধরা পড়া ছাত্রলীগ কর্মী আনিকাকেও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করেন।
অভিযোগ করে আরও বলা হয়, ভূয়া ভর্তির দায়ে শাস্তিপ্রাপ্ত নীল দলের (আওয়ামী লীগপন্থী) এক শিক্ষককে সফরসঙ্গী করে বিদেশ ভ্রমণ, নীল দলের নেতাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক, বিতর্কিত শিক্ষকদের রিসার্চ এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেছেন। এছাড়া শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে নীল দলের শিক্ষক অন্তর্ভুক্ত করা ও সাত কলেজ ইস্যুতে অস্থিরতা তৈরির অভিযোগ তুলেছে সাদা দল।
ঢাবি সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার বলেন, প্রো-উপাচার্য ড. মামুন আমাদের বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন, তবে অনেক কিছুর জবাব এড়িয়ে গেছেন। সাদা দলের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সত্যতা প্রমাণ হওয়ায় নকল করা ছাত্রীর নিয়োগ আটকানো হয়েছে। আমরা উনাকে এক সপ্তাহ সময় দিয়েছি বিষয়গুলো সংশোধনের জন্য। আগামী দিনে আমরা অবরুদ্ধ করব নাকি গেটে দাঁড়াবো সেটা উনার আচরণের ওপর নির্ভর করবে। উনি সাদা দলের অনেক বিচ্ছিন্নতাবাদীর ওপরেও প্রভাব বিস্তার করেন।
তিনি আরও বলেন, উনার অনেক ব্যাখ্যা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। ‘মেধা’ ও ‘স্বচ্ছতা’র নামে যদি ফ্যাসিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। আমরা প্রত্যাশা করি, আমাদের সহকর্মী হিসেবে বিষয়গুলো সংশোধন করে নিবেন। তিনি আমাদের সাথে বসে আলোচনার আশ্বাস দিয়েছেন।
তবে এসকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিয়োগের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছভাবে ও প্রশাসনিক নিয়ম মেনে হয়েছে। নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের থেকে প্রার্থীর মেধা, দক্ষতা, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও সততা সম্পর্কে জানা হয়। এছাড়া স্বৈরাচার সরকারের দোসর ছিল কি-না জানতে চেয়েছি।
অধ্যাপক মামুন বলেন, সাদিয়া আফরিন নামে যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সে ছাত্রলীগে ছিল এটা আজকে উনাদের থেকে প্রথম শুনেছি। নকলের অভিযোগ শুনার পর আমি ওই বিভাগের চেয়ারম্যানকে বিভাগীয় মিটিং ডেকে ভেরিফাই করতে বলেছি। তিনি আমাকে জানিয়েছেন যে নকলের কোনো প্রমাণ নেই। এক্সাম কন্ট্রোলার অফিস তদন্ত করে জানিয়েছে এমন কোনো প্রমাণ নেই।সিলেকশন বোর্ডের সদস্যরাও অভিযোগের সত্যতা পায়নি।
তিনি আরও বলেন, আমি চেয়েছি প্রশাসনকে নিরপেক্ষ রাখতে, বিগত স্বৈরাচার সরকারের প্রশাসনিক নিয়মের পরিবর্তন আনতে। উনাদের কথা হচ্ছে আমি কেন উনাদের থেকে জানতে চাইনি। উনাদেরকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে সুপারিশ করে থাকেন। তবে আমি এসব অ্যালাউড করি না। নিয়োগপ্রাপ্ত কারও নামে যদি অভিযোগ থাকে আমি সেটা সিন্ডিকেটে নিয়ে যাবো।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন