এক সময়ের খরস্রোতা ইছামতি নদীর বুক জুড়ে এখন সোনালি ধানের ক্ষেত। নদীর বুকে চাষ করে বোরোর বাম্পার ফলনও হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে এসব ধান কাটা-মাড়াই শুরু হবে। বোরো ধানের খেত দেখলে কে বলবে এটা কোন নদী।
এখন নদীতে পানি না থাকায় শুকনো মৌসুমের ফসলে সেচ দিতে পারেন না কৃষক। নদীর মধ্যেই শ্যালো মেশিন বসাতে হয় পানি তোলার জন্য। অথচ এক সময় এই নদীর পানি দিয়ে তীরবর্তী জমিতে সেচ দিয়ে কৃষকেরা চাষাবাদ করতেন। অবশ্য বর্ষা মৌসুমে অল্প পানিতেই নদীর পাড় উপচে পাশের জমি নিমজ্জিত হয়ে যায়। তখন নদীর নিজস্ব রূপে ফিরে।
ফলে এক সময়ের আর্শীবাদ এখন কৃষকের কান্নার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। নাব্যতা হারানো বর্তমানে ইছামতি নদীটি অস্তিত্ব সংকটে। এ নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে এখনই পরিকল্পনা নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
স্থানীয়রা বলছেন, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার নশরতপুর, আলোকডিহি, সাতনালা এলাকার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় খরস্রোতা ইছামতি নদীটি। এক সময় এ নদীতে চলত বড় বড় পালতোলা নৌকা-জাহাজ।ব্যবসা-বাণিজ্যে সুবিধায় নদীর তীরে গড়ে ওঠে রানীরবন্দর। কিন্তু রানীরবন্দর ব্যবসা-বাণিজ্যের এলাকা হলেও বাকি সব ইতিহাস।
গছাহার গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ শিক্ষক বাবু নন্দীশ্বর দাস, নশরতপুর গ্রামের সাবেরউদ্দিন, জোত সাতনালা গ্রামের মজিবর রহমানসহ কয়েকজন জানান, ইছামতি নদী এখন আর নদী নেই। হঠাৎ কেউ দেখলে মনে করবেন সমতল ভূমি। নদীর বুকে মাঝে মধ্যে কিছু কিছু জায়গায় দুই-একটি গর্ত দেখা যায়। সেগুলোতেও কিছু পানি আছে। এ নদীতে বছরের বেশির ভাগ সময়েই পানি থাকে না। নাব্যতা হারানো ইছামতি নদী এখন বোরো ধানের ক্ষেত। শুকনা মৌসুমের আগেই নদী শুকিয়ে যাওয়ায় হারিয়েছে অনেক দেশি প্রজাতির মাছ ও জলজপ্রাণী। এতে জেলেরা পেশা বদল করে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। নদী শুকিয়ে জীর্ণ এক মরা খালে পরিণত হয়েছে। নদীর বুকজুড়ে পানির বদলে বোরোধান চাষ হচ্ছে। তবে বছরের প্রায় সময় নদীতেই চলে ভুট্টা, ধান, রসুনসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ। তাই চাষাবাদে নদীর মাঝেই পানি উত্তোলনে শ্যালোমেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। নদীটি খনন করা হলে নদীর আশপাশের কৃষকরা চাষাবাদে উপকৃত হবে। এ নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে জেলে পরিবাররা।
দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ জানান, জেলায় ছোট-বড় মিলে ৩৪টি নদী রয়েছে। পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে ইতিমধ্যে পুর্ণভবাসহ ৬টি নদীতে খনন করা হয়েছে। আগামীতে ইছামতি ও ছোট যমুনা নদী খননের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল