পৃথিবীর অভ্যন্তরের ক্রমাগত পরিবর্তনের কারণে গ্রহটিকে ঘিরে থাকা চৌম্বক ক্ষেত্র (Magnetic Field) দুর্বল হচ্ছে। গবেষকরা সতর্ক করেছেন, আটলান্টিক মহাসাগরের ওপরের অংশে এই অদৃশ্য চৌম্বকীয় ঢাল দুর্বল হয়ে পড়ছে, যা মহাজাগতিক ক্ষতিকর বিকিরণ থেকে জীবজগৎকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি করছে।
‘সাউথ আটলান্টিক অ্যানোমালি’ নামে পরিচিত এই দুর্বল অংশটি ধীরে ধীরে আরও বড় হচ্ছে। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার ‘সোয়ার্ম’ স্যাটেলাইট মিশন থেকে ১১ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, দক্ষিণ আমেরিকা ও দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের ওপর বিস্তৃত এই দুর্বলতা ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ইউরোপ মহাদেশের অর্ধেক আকারের এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। পৃথিবীর প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার গভীরে গলিত লোহার ঘূর্ণন থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎপ্রবাহ এই চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে। বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল নোরিজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ব্যবস্থা সব সময় পরিবর্তনশীল। সোয়ার্ম মিশনের মাধ্যমে পাওয়া বিস্তারিত তথ্যে দেখা গেছে, এই সুরক্ষামূলক চৌম্বক ঢালটি সময়ের সঙ্গে বদলে যাচ্ছে এবং দুর্বলতা আগের চেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
স্যাটেলাইট ও ঝুঁকির কারণ
এই দুর্বল চৌম্বক ক্ষেত্রটি মহাকাশ মিশনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় স্যাটেলাইটগুলোতে শক্তিশালী বিকিরণ আঘাত করে, যা ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি বিকল বা হার্ডওয়্যার ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ডেনমার্কের অধ্যাপক ক্রিস ফিনলে বলেন, চৌম্বক ক্ষেত্র সব জায়গায় সমানভাবে দুর্বল হচ্ছে না। ‘আফ্রিকার দিকে চৌম্বক ক্ষেত্র অনেক দ্রুত দুর্বল হচ্ছে, যা দক্ষিণ আমেরিকার দিকে তুলনামূলক ধীরে দুর্বল হচ্ছে।’ সোয়ার্মের তথ্য বলছে, গলিত লোহার কোরের অস্বাভাবিক চলাচলের কারণে চৌম্বক রেখাগুলো উল্টো হয়ে ভিতরের কোরের দিকে ফিরে যাচ্ছে, যার একটি অংশ আফ্রিকার নিচে পশ্চিম দিকে সরে যাচ্ছে।
অন্যান্য পরিবর্তন
দক্ষিণ গোলার্ধে এই দুর্বলতা দেখা গেলেও অন্য কিছু এলাকায় চৌম্বক ক্ষেত্র ভিন্নভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। উত্তর গোলার্ধে এটি সাইবেরিয়ার ওপর শক্তিশালী হচ্ছে, কিন্তু কানাডার ওপর দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে চৌম্বক উত্তর মেরুর অবস্থান রাশিয়ার দিকে সরে যাচ্ছে। এই পরিবর্তন ন্যাভিগেশন পদ্ধতিতে প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্যসূত্র : নোরিজ