প্রথমবার সিরিজ জয়ের পথ ধরে হাতছানি ছিল পাকিস্তানকে শূন্য হাতে ফেরানোর। টানা তৃতীয় ম্যাচে মিরপুরের গ্যালারি ছিল প্রায় টইটম্বুর। কিন্তু প্রত্যাশা আর পারফরম্যান্স এবার এক বিন্দুতে মিলল না। বোলিং এ দিন মিইয়ে থাকল অনেকটাই। ব্যাটিং তো শুরু হতে না হতেই ধ্বংস্তুপ! বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের আনন্দ শেষ পর্যন্ত তাই রূপ নিল না হোয়াইটওয়াশের পূর্ণতায়।
তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৭৪ রানের জয়ে হোয়াইটওয়াশড হওয়া থেকে রক্ষা পেল পাকিস্তান। বাংলাদেশের সিরিজ জয় ২-১ ব্যবধানে।
দেশের মাঠে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সবচেয়ে বড় পরাজয় এটি।
আগের দুই ম্যাচে টপ অর্ডারের বিভীষিকার পর পাকিস্তানকে এ দিন টপ অর্ডারে স্বস্তি দেন সাহিবজাদা ফারহান। সিরিজে প্রথমবার মাঠে নেমে এই ওপেনার উপহার দেন পাঁচ ছক্কায় ৪১ বলে ৬৩ রানের ইনিংস। পাশাপাশি আরও কয়েকটি কার্যকর ইনিংসে পাকিস্তান ২০ ওভারে তোলে সিরিজের সর্বোচ্চ ১৭৮ রান।
চ্যালেঞ্জিং রান তাড়ায় মুখ থুবড়ে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং। শুরুতেই লড়াই থেকে ছিটকে পড়া দল পরে কোনোরকমে করতে পারে ১০৪ রান। দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেন কেবল দুজন ব্যাটসম্যান।
প্রথম দুই ম্যাচেই সিরিজ জয় নিশ্চিত হওয়ার পর একাদশে এ দিন পাঁচটি পরিবর্তন আনে বাংলাদেশ। তাতে ব্যাটিংয়ের শক্তি কমে যায় কিছুটা। যাদের ওপর ছিল ভরসা, তারা হতাশ করেন পুরোপুরি।
আগের দুই ম্যাচের তুলনায় উইকেট এ দিন বেশ ভালো ছিল। ১৭৯ রানের লক্ষ্য তাই বাংলাদেশের নাগালের বাইরে মনে হয়নি। কিন্তু সেই আশায় গুঁড়েবালি রান তাড়া শুরুর পরপরই।
ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলে উইকেট হারান একাদশে ফেরা তানজিদ হাসান (০)। সোজা বলে ফ্লিক করার চেষ্টায় বোল্ড হন লিটন কুমার দাস (৮)। সিরিজের তিন ম্যাচে বাংলাদেশ অধিনায়কের রান ১৭।
দুটি চার মারার ফাঁকে মেহেদী হাসান মিরাজ হেলমেটে আঘাত পান শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে। একটু পরই বিলিয়ে দেন উইকেট (৯)।
সালমান মির্জার ভেতরে ঢোকা দুটি ডেলিভারিতে এক ওভারেই বোল্ড জাকের আলি (১) ও শেখ মেহেদি হাসান (০)।
পঞ্চম ওভারে বাংলাদেশের রান তখন ৫ উইকেটে ২৫।
পাওয়ার প্লে শেষেও ইনিংস স্থিরতা পায়নি। সালমান আলি আগাকে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে উইকেট হারান শামীম হোসেন (৫)।
তখনও পর্যন্ত ধুঁকতে ধুঁকতে এক প্রান্তে টিকে ছিলেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। তার যন্ত্রণাময় উপস্থিতি শেষ হয় আহমেদ দানিয়ালকে স্লগ করে (১৭ বলে ১০)।
বাংলাদেশের রান তখন ৭ উইকেটে ৪১। সর্বনিম্ন রানের ৭০ রানের রেকর্ডও অনেকটাই দূরের পথ।
নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদের সঙ্গে কিছুটা লড়াই করে দলকে সেই বিব্রতকর স্বাদ থেকে রক্ষা করেন মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। দুটি করে চার ও ছক্কায় তার ৩৪ বলে ৩৫ রানের ইনিংসে একশ পেরোতে পারে দল।
ম্যাচের শুরুতে টস হেরে যখন বোলিংয়ে নামে বাংলাদেশ, আগের দুই ম্যাচের মতোই তাদের আশা ছিল পাকিস্তানকে ভোগান্তিতে ফেলার। কিন্তু সাহিবজাদা ফারহান দলকে এনে দেন উড়ন্ত শুরু।
শেখ মেহেদি হাসানের প্রথম ওভারেই ছক্কা ও চার দিয়ে সাহিবজাদার শুরু। পাওয়ার প্লের প্রতি ওভারেই তার ব্যাট থেকে এসেছে চার বা ছক্কা।
প্রথম পাঁচ ওভারে অনেকটা ঝিমিয়ে ছিলেন সাইম আইয়ুব। ষষ্ঠ ওভারে তাসকিন আহমেদকে জোড়া চারে জেগে ওঠেন তিনিও।
৬ ওভারে পাকিস্তান তোলে ৫৭ রান, এই সিরিজে দুই দল মিলিয়েই যা সর্বোচ্চ।
পাওয়ার প্লে শেষেও সাহিবজাদার ‘পাওয়ার’ প্রদর্শনী চলকে থাকে। মিরাজের তিন বলের মধ্যে ছক্কা মারেন তিনি। ফিফটিতে পৌঁছে যান ২৯ বলে।
৪৭ বলে ৮২ রান তুলে থামে উদ্বোধনী জুটি। নাসুম আহমেদের বলে ছক্কা মারার পরের বলে আরেকটি চেষ্টায় আউট হন সাইম (১৫ বলে ২১)।
একটু পর সাহিবজাদার পথচলারও ইতি টানেন নাসুম। তিনে নেমে দুই দফায় জীবন পেয়ে মোহাম্মাদ হারিস করতে পারেন ১৪ বলে ৫।
কমে আসা রানের গতিতে দম দেন হাসান নাওয়াজ। আগের দুই ম্যাচে শূন্য রানে ফেরা ব্যাটসম্যান এবার তিন ছক্কায় ১৭ বলে করেন ৩৩।
শেষ দিকে দুটি করে চার ও ছক্কায় মোহাম্মাদ নাওয়াজের ১৬ বলে ২৭ রানের ইনিংস পাকিস্তানকে পৌঁছে দেয় ১৮০ রানের কাছাকাছি।
সেই পুঁজিই হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর বিশ্বাস জোগায় পাকিস্তানকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১৭৮/৭ (সাহিবজাদা ৬৩, সাইম ২১, হারিস ৫, হাসান নাওয়াজ ৩৩, সালমান আলি আগা ১৩*, তালাত ১, মোহাম্মাদ নাওয়াজ ২৭, ফাহিম ৪, আফ্রিদি ১*; মেহেদি ৩-০-৩৬-০, শরিফুল ৪-০-৩৯-১, তাসকিন ৪-০-৩৮-৩, নাসুম ৪-০-২২-২, সাইফ ৪-০-২৮-১, মিরাজ ১-০-১৪-০)।
বাংলাদেশ: ১৭.৪ ওভারে ১০৪ (তানজিদ ০, নাঈম ১০, লিটন ৮, মিরাজ ৯, জাকের ১, মেহেদি ০, শামীম ৫, সাইফ ৩৫*, নাসুম ৯, শরিফুল ৭; সালমান মির্জা ৪-০-১৯-৩, ফাহিম ২-০-১৩-২, দানিয়াল ৩-০-১৬-১, সালমান আগা ২-০-১২-১, সাইম ১-০-২-০, তালাত ৩-০-৩২-২, মোহাম্মাদ নাওয়াজ ১.৪-০-৪-২)।
ফল: পাকিস্তান ৭৪ রানে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে জয়ী। ।
ম্যান অব দা ম্যাচ: সাহিবাজাদা ফারহান।
ম্যান অব দা সিরিজ: জাকের আলি।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ