এশিয়া কাপে খাদের কিনারায় বাংলাদেশ। একটু এদিক-ওদিক হলেই পতন নিশ্চিত। কোচ আর ক্রিকেটারদের মনে নানান প্রশ্ন। সমর্থকদের কপালে চিন্তার বলিরেখা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ সুযোগটা কাজে লাগাতে পারবেন লিটন দাসরা! এশিয়া কাপে টিকে থাকার জন্য আজকের ম্যাচে কেবল জয়ই শেষ কথা নয়। জয়ের ব্যবধানটাও হতে হবে বিরাট। না হলে রানরেটের মারপ্যাঁচে খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকাও আর হবে না। নির্ঘাত পতন। সে পতন ঠেকাতেই আজ আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। রাত সাড়ে ৮টার ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকবে শ্রীলঙ্কাও। আফগানিস্তানের জয় মানেই শ্রীলঙ্কারও স্বস্তি।
এশিয়া কাপে নিজেদের সূচনাটা ভালোই করেছিল বাংলাদেশ। জয় পেয়েছিল হংকংয়ের বিপক্ষে। তবে সে জয় ছিল কাঙ্ক্ষিত। বরং জয়ের ধরনটা অনেকেই পছন্দ করেননি। হংকংয়ের ১৪৩ রান টপকাতেই বাংলাদেশকে খেলতে হয়েছিল ১৭ ওভার ৪ বল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সুযোগ ছিল নিজেদের দুর্বলতা ঝেড়ে ফেলে সামনের পথটা খুঁজে নেওয়ার। কিন্তু সে সুযোগ লিটন দাসরা বাজেভাবে হারালেন। টপ অর্ডার পুরোপুরি ব্যর্থ। দুই ওপেনার সাজঘরে ফেরেন শূন্য রানে। অধিনায়ক লিটন দাসও ২৮ রানের বেশি যেতে পারেননি। শেষ দিকে জাকের আলি ও শামীম হোসেন ঘুরে না দাঁড়ালে কেলেঙ্কারিই হয়ে যেত। তবে বাংলাদেশের ১৩৯ রান লঙ্কানরা হেসেখেলেই পেরিয়ে যান। তাঁরা খেলেন মাত্র ১৪ ওভার ৪ বল। রানরেটটা বেশ বাড়িয়ে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা।
একদিকে পরাজয়ের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার তাড়না, অন্যদিকে রানরেটের বিরাট বোঝা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করছে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। সে চ্যালেঞ্জটা নেওয়ার জন্য কতটা প্রস্তুত লিটনবাহিনী? অধিনায়ক লিটন বলছেন, ‘এটা (আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ) আমাদের জন্য ডু অর ডাই লড়াই।’ বরং তার চেয়েও হয়তো কিছুটা বেশিই।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের টি-২০ লড়াই খুব একটা সুখকর নয়। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে দুই দলের শেষ সাক্ষাৎ ছিল গত বছরের ২৪ জুন। টি-২০ বিশ্বকাপের সেই ম্যাচে বাংলাদেশকে ৮ রানে পরাজিত করে আফগানরা। দুই দলের টি-২০ লড়াইয়েও অনেকটা এগিয়ে আফগানিস্তান। ১২ বারের লড়াইয়ে তারা সাতবার জয় পেয়েছে। বাংলাদেশ পাঁচবার। অতীত পরিসংখ্যানে এগিয়ে থাকছে আফগানিস্তানই। তবে বাংলাদেশ দলের ভিতরে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় রয়েছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরাজয়ের বেদনা ভুলতে এ ম্যাচে জয় চান টাইগাররা।
এশিয়া কাপে বাংলাদেশ খেলছে বি গ্রুপে। এই গ্রুপে ২ পয়েন্ট করে রয়েছে আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা (গতকালের ম্যাচের আগে) এবং বাংলাদেশের। তবে রানরেটে অনেক এগিয়ে আফগানিস্তান (+৪.৭০০)। বাংলাদেশের রানরেট -০.৬৫০। গতকালের ম্যাচের আগে শ্রীলঙ্কার রানরেট ছিল +২.৫৯৫। গতকাল হংকংয়ের বিপক্ষে জয় পেয়ে থাকলে লঙ্কানদের রানরেট বেড়েছে অনেকটা। আজ বাংলাদেশের সামনে কেবল জয়ের চ্যালেঞ্জই নয়, আছে রানরেট বাড়িয়ে নেওয়ার লড়াইও। রানরেট বাড়াতে ব্যর্থ হলে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিতেও সুপারফোরের আশা পূরণ হবে না। কারণ আফগানিস্তানের হাতে আজকের পরও একটি ম্যাচ থাকবে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সে ম্যাচে জিতলেই আফগানরা চলে যাবেন সুপারফোরে। তাদের সঙ্গী হতে পারে শ্রীলঙ্কা। অবশ্য গত রাতে শ্রীলঙ্কা পরাজিত হয়ে থাকলে বাংলাদেশের সামনে সমীকরণ কিছুটা সহজ হয়ে যাবে!
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ব্যাটিং ও বোলিংয়ে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। এমনকি ফিল্ডিংয়েও পাস করতে পারেনি। অন্যদিকে তিনটি বিভাগেই আফগানরা নিজেদের বেশ শক্ত প্রতিপক্ষ প্রমাণ করেছেন। দলটির ব্যাটার আজমতউল্লাহ ওমরজাই দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন। ফর্মে আছেন ওপেনার সেদিকুল্লাহ-নবীরাও। বল হাতে ফজলহক ফারুকি, ওমরজাই, রশিদ খান, গুলবদনি নাইবরা বিশ্বসেরাদের সারিতে। আফগানরা শক্ত প্রতিপক্ষ। তবে অধিনায়ক লিটন দাস কি নিজেদের ডু অর ডাই ম্যাচটা জয়ের কৌশল খুঁজে পাবেন? নাকি আরও একবার সমর্থকদের হতাশ করবেন?