ভারতের কেরালা রাজ্যে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে মস্তিষ্ক-খেকো অ্যামিবার দাপট। এই অ্যামিবার আক্রমণে রাজ্যটিতে বিগত নয় মাসে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। এর মধ্যে মধ্যে সেপ্টেম্বরেই মারা গেছে সাতজন।
রাজ্যের কোঝিকোড়, কান্নুপুর এবং মালাপ্পুরমে রোগের দাপট সবচেয়ে বেশি। কোঝিকোড়ে গত মাসেও মারা গেছে তিনজন। তাদের মধ্যে রয়েছে- তিন মাসের শিশু, নয় বছরের কিশোরী এবং ৫২ বছরের নারীও। ২০২৫ সালে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাজ্যটিতে মোট আক্রান্ত হয়েছে ৫২ জন। তাদের মধ্যে ৩৩ জন পুরুষ ও ১৯ জন নারী।
কিন্তু এই রোগের উৎস কী ? ভাইরাসের মতো কি এই মস্তিষ্ক-খেকো অ্যামিবাও ছড়িয়ে পড়তে পারে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়? বিষয়টা ভাবাচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
মস্তিষ্ক-খেকো অ্যামিবা আসলে কী?
কোঝিকোড় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রবি শঙ্করের মতে, এই অ্যামিবা নাক দিয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছায় । ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে এই রোগের পরিণতি মৃত্যু। তবে সতর্ক থাকলে এই রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
কেরালার আবহাওয়া উষ্ণ। বিশেষত জলাশয় থেকেই এই রোগের উৎপত্তি। বৈজ্ঞানিক ভাষায় একে নেগেলেরিয়া ফাওলেরি (Naegleria fowleri) বলা হয়। ডা. শঙ্করের মতে, অ্যামিবা নিজেই মানুষকে আক্রমণ করে না। তবে যেখানকার পানিতে অ্যামিবা রয়েছে, সেখানে যদি কেউ স্নান করে বা সাঁতার কাটতে গিয়ে নাকের ভিতরে পানিতে ঢুকে যায়, তখন অ্যামিবা নাকের টিস্যু থেকে মস্তিষ্কে পৌঁছায়। সেখানে মেনিনজাইটিসের মতো রোগের সৃষ্টি করে।
এই রোগ কতটা বিপজ্জনক?
ডা. শঙ্করের মতে, এটি বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক সংক্রমণগুলোর মধ্যে একটি। সংক্রমণের ১ থেকে ৯ দিনের মধ্যে লক্ষণগুলো দেখা দিতে শুরু করে। প্রাথমিকভাবে, মাথাব্যথা, জ্বর, বমিভাব এবং বমির মতো সাধারণ ফ্লুর লক্ষণ দেখা যায়। তবে শিগগিরই দেখা যায় রোগীর ঘাড় শক্ত হয়ে যায়। এর পরে নানারকম বিভ্রান্তি দেখা দিতে শুরু করে। খিঁচুনি হতে পারে। রোগী হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যায়। যদি সময়মতো চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে পাঁচদিনের মধ্যে মৃত্যু ঘটে। এই ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত।
কেরালাতেই মৃত্যু কেন বেশি?
কেরালার স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালে ৩৬টি মস্তিষ্ক-খেকো অ্যামিবা আক্রমণের কেস নথিভুক্ত হয়েছিল। তাতে নয়জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২০২৫ সালে সংখ্যাটা দ্বিগুণ হয়েছে। এর কারণ হল উষ্ণতা বৃদ্ধি , দূষণ এবং জলাশয়গুলোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব। প্রকৃতপক্ষে গিয়েছে, কোঝিকোড় এবং মালাপ্পুরমের পুকুরের পানি খুব নোংরা।
ডা. শঙ্করের মতে, এই বছর তার হাসপাতালে আসা ১৫ জন রোগীর মধ্যে পাঁচজনই মারা গেছেন। তবে, দুই রোগীর প্রাণ রক্ষা করা গিয়েছে । কারণ তাদের সমস্যাটি মস্তিষ্কে পৌঁছতে পারেনি। এখন ওই রাজ্যের সরকার পুকুরগুলোর পানি পরীক্ষা করা শুরু করেছে এবং ক্লোরিনেশন শুরু করেছে।
লক্ষণগুলো চিনতে পারলে প্রতিরোধ সম্ভব
সাঁতার কাটার পর যদি মাথাব্যথা, জ্বর বা ঘাড়ে ব্যথা হয়, তাহলে অবিলম্বে কোনও ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ডা. শঙ্করের মতে, এই রোগে স্নায়ুবিক সমস্যা দ্রুত দেখা দেয়। এটি সিএসএফ পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করা যেতে পারে, তবে রোগটি হতে না দেওয়াই সবথেকে ভাল। এই সময় সাঁতার কাটা এড়িয়ে চলুন। নাকের ক্লিপ ব্যবহার করুন যাতে পানি নাকে না যায়। ডাইভিং করার সময় আপনার নাক বন্ধ রাখুন। যদি সম্ভব হয় নাক পরিষ্কার করার জন্য জীবাণুমুক্ত উপদান বা ফুটানো পানি ব্যবহার করুন। সূত্র: গালফ নিউজ, এবিপি আনন্দ
বিডি প্রতিদিন/একেএ