বাংলাদেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো জাতীয় গ্রিডে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। এর মধ্যে বাগেরহাটের রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রও একটি। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ১৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নকশাগত দিক থেকে দেশের অন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে যেমন ব্যতিক্রম একইভাবে এর বৈশিষ্ট্যগুলো একে অন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে স্বতন্ত্র করেছে। ইন্ট্রিগ্রেটেড ফ্লু গ্যাস ডিসালফারাইজেশন (এফজিডি) সিস্টেম উইথ নো বাইপাস প্রযুক্তির কারণেই এটি অন্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এতে সালফার অক্সাইডের দূষণ রোধ করা যাচ্ছে। এ ছাড়া এই কেন্দ্রে আছে লো নক্স ইমিশন প্রযুক্তি। এতে নাইট্রাস অক্সাইডের মাত্রা কম থাকে। আর এফজিডি প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে সালফার অক্সাইডকে বিশেষ পদ্ধতিতে জিপসামে পরিণত করা হয়। পরবর্তী সময়ে এই জিপসাম ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লা থেকে উৎপন্ন অ্যাশ বা ছাই নেদারল্যান্ডস থেকে আনা স্বয়ংক্রিয় বার্জ লোডার দিয়ে উন্মুক্ত টেন্ডারের মাধ্যমে বিভিন্ন সিমেন্ট কারখানায় বিক্রি হয়। যা পরিবেশদূষণ রোধ করে। অথচ অন্য কেন্দ্রগুলো খোলা অবস্থায় এই জিপসাম ও ছাই পরিবহন করায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এ ছাড়া সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে আছে দেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় চিমনি। যার উচ্চতা ২৭৫ মিটার।
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকৌশলীদের মধ্যে দেশের অন্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শন করে এসেছেন এমন দুজন প্রকৌশলী সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকায় বলেন, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এফজিডি প্রযুক্তিটি বাইপাসব্যবস্থায় পরিচালিত। দেশের অন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যদি এই ব্যবস্থায় কোনো সমস্যা হয় তাহলে তারা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালাতে পারবেন। কিন্তু নকশার কারণে বয়লারের সঙ্গে সমন্বিত থাকায় রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ চাইলেও বাইপাস করতে পারবে না। যদি রামপাল কর্তৃপক্ষ বাইপাস করার চেষ্টা করে তাহলে বয়লারটিকেও বন্ধ করতে হবে। তখন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালানো যাবে না। আর এই বৈশিষ্ট্যই একে অন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আলাদা করেছে।
এ ছাড়া রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ছাই ও জিপসাম বহনের যে ব্যবস্থা আছে সেটিও ভিন্ন। স্বয়ংক্রিয় বার্জ লোডারের মাধ্যমে জেটি থেকে সরাসরি ছাই ও জিপসাম পরিবহন করা হয়। যা পরে টেন্ডারের মাধ্যমে সিমেন্ট কারখানাগুলোর কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। চিমনির উচ্চতার দিক দিকেও রামপাল ব্যতিক্রম। পটুয়াখালীর পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের চিমনির উচ্চতা যেখানে ২২০ মিটার সেখানে রাপমপালের চিমনির উচ্চতা ২৭৫ মিটার। বলা হয় এটি বাংলাদেশের মানুষের তৈরি করা সবচেয়ে বড় অবকাঠামো। এতে এই চিমনি দিয়ে নির্দিষ্ট মাত্রায় কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে এবং পরিবেশের সঙ্গে যখন ধীরে ধীরে এর ধোঁয়া মিশে যায় তার প্রভাবও তুলনামূলক কম। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) রমানাথ পূজারী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ কেন্দ্রে যে কয়লা ব্যবহার করা হচ্ছে তা ইন্দোনেশিয়ার। এই কয়লা যখন জাহাজে লোড করা হয় তখনো পরীক্ষা করা হয় আবার যখন জাহাজ থেকে নামানো হয় তখনো এর মান পরীক্ষা করা হয়। সে হিসেবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যে কয়লা ব্যবহৃত হয় তার মান নিয়ে কোনো আপস করি না।
রামাপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দেশের অন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে কতটা স্বতন্ত্র এবং এই কেন্দ্রের বিশেষত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে পিডি আরও বলেন, এটি একটি ব্যতিক্রমী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রৎ কেন্দ্র। এর নকশা ব্যতিক্রমী। এর বিশেষত্বগুলোও সুন্দর। ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিবেশের সব মানদণ্ড মেনে তৈরি করা হয়েছে। এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, যা কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রের জন্য বিশ্বে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকর প্রযুক্তি। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ফ্লু-গ্যাস ডিসালফারাইজেশন (এফজিডি) প্রযুক্তি ব্যবহার করছে যা কেন্দ্রে সালফার দূষণ রোধ করছে। এ ছাড়া এখানে আছে লো নক্স বয়লার। এতে কেন্দ্রে নাইট্রাস অক্সাইডের মাত্রা কম থাকে। এটি একটি জিরো ডিসচার্জ প্ল্যান্ট। অন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর যেখানে বাইপাস সিস্টেম আছে কিন্তু আমাদের বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বাইপাসের কোনো ব্যবস্থা নেই। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চারপাশে পরিবেশও নিয়মিত নজরদারি করা হয়। আমাদের কার্বন নিঃসরণ যাতে নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে থাকে সেটিও আমরা নিশ্চিত করি। বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপন্ন সালফার ডাই-অক্সাইডের মাত্রাও খুব কম।