জাতীয় সামার অ্যাথলেটিকসে ট্র্যাকে নেমেই শ্রেষ্ঠত্ব পুনরুদ্ধার করলেন ইমরানুর রহমান। গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি জাতীয় অ্যাথলেটিকসে অংশ নিতে পারেননি। সেবার তার অনুপস্থিতিতে দ্রুততম মানব হয়েছিলেন ইসমাইল। এবার ইসমাইলকে হারিয়েই ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সেরা হয়েছেন ইমরানুর রহমান। তিনি গতকাল ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামের ট্র্যাকে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ১০.৬৪ সেকেন্ড টাইমিং করে সেরা হয়েছেন। ১০.৮৬ সেকেন্ড টাইমিং করে দ্বিতীয় হয়েছেন আবদুল মোতালেব। ইসমাইল ১০.৮৮ সেকেন্ড টাইমিং করে হয়েছেন তৃতীয়।
জাতীয় অ্যাথলেটিকসে ইমরানুরকে ঘিরে অনেক আগ্রহ ছিল। ইনজুরি থেকে ফিরে তিনি কেমন করেন, তাই দেখতে চেয়েছিলেন সবাই। ইংল্যান্ডের শেফিল্ডে জন্ম ও বেড়ে ওঠা এ অ্যাথলেট হতাশ করেননি। প্রত্যাশা পূরণ করেছেন। তাকে নিয়েই এবার এসএ গেমসে স্প্রিন্টে পদক জয়ের আশা করছে অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন। ২০২২ সালে প্রথমবার বাংলাদেশের জাতীয় অ্যাথলেটিকসে অংশ নিয়েই রেকর্ড গড়ে ১০০ মিটার জয় করেন তিনি। এশিয়ান পর্যায়ে লড়াইয়ে নেমে দেশকে উপহার দিয়েছেন সোনার পদক। ২০২৩ সালে এশিয়ান ইনডোর ৬০ মিটারে সোনা জিতেছেন। এসএ গেমসেও কি তিনি সোনার পদক উপহার দিতে পারবেন!
জাতীয় সামার অ্যাথলেটিকসের প্রথম দিনেই বিতর্ক দেখা দেয়। অবশ্য বিতর্কটা নিরপেক্ষভাবেই শেষ করার দাবি করেছে অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন। মেয়েদের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে হিসেব করে সেরা ঘোষণা করা হয় সুমাইয়া দেওয়ানকে। তিনি ১২.১৯ সেকেন্ড টাইমিং করেছেন। তবে সিদ্ধান্তটি প্রথমে মেনে নেননি অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সদস্য এবং ১০০ মিটার স্প্রিন্টের প্রতিযোগী শিরিন আক্তার। তিনি প্রথম হওয়ার দাবি জানান। অবশ্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর সুমাইয়াকেই বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। শিরিন ১২.২১ সেকেন্ড টাইমিং করে দ্বিতীয় হয়েছেন। এ ব্যাপারে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মিডিয়াকে বলেন, ‘কমিটির সদস্য বা অন্য কিছু নয়। ফলাফল যেটা সেটাই আমরা দিচ্ছি। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ।’ তবে দেরিতে ফল ঘোষণা করায় তিনিও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। ফটোফিনিশিং মেশিন দিয়ে চূড়ান্ত বিচার করা হয়েছে। খোলা চোখে দশমিক শূন্য দুই সেকেন্ড ব্যবধান ধরা পড়েনি। অনেকের কাছেই মনে হয়েছে শিরিন আগে টাচলাইনে পা রেখেছেন। আবার কারও মতে, সুমাইয়া ছিলেন সবার আগে। ফটোফিনিশিং মেশিন না থাকলে এবারের বিতর্ক এড়ানো বেশ কঠিনই হতো! জাতীয় সামার অ্যাথলেটিকস শুরু হওয়ার আগেই ফেডারেশন থেকে দাবি করা হয়েছিল, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার করা হবে এবার। অতীতে অনেকবারই জাতীয় অ্যাথলেটিকসে ফল নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। এবার সেসব ঘটতে দিতে চায় না ফেডারেশন।
এদিকে জাতীয় সামার অ্যাথলেটিকসের প্রথম দিনেই দুটি জাতীয় রেকর্ড হয়েছে। ছেলেদের ডিসকাস থ্রো ইভেন্টে ৪৬.৯৪ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করে নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আবদুল আলিম। পূর্বে এ ইভেন্টে ২০১০ সালে একই সংস্থার আজহারুল ইসলাম ৪৪.৯৮ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করে রেকর্ড গড়েছিলেন। এ ছাড়া মেয়েদের শটপুট ইভেন্টে জান্নাত বেগম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষে ১৩.৯১ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করে নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েন। এ ইভেন্টে আগের রেকর্ডটি ছিল বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাকিয়া আক্তারের (১৩.৫২ মিটার)। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মোট ১১টি ইভেন্ট সম্পন্ন হয়েছে জাতীয় সামার অ্যাথলেটিকসে। ৭টি সোনা, ৬টি রুপা ও ৬টি ব্রোঞ্জসহ মোট ১৯টি পদক নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে। ৫টি সোনা, ৬টি রুপা এবং ৩টি ব্রোঞ্জসহ মোট ১৪টি পদক নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং ১টি করে ব্রোঞ্জ পদক নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে বিকেএসপি, বাংলাদশ বিমানবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশ।
গতকাল জাতীয় সামার অ্যাথলেটিকসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত অ্যাথলেট ও সংগঠকদের সম্মাননা জানিয়েছে ফেডারেশন। অ্যাথলেটিকস থেকে ক্রীড়াবিদ ও সংগঠক মিলিয়ে ৪৬ জন জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন।