কবি নির্মলেন্দু গুণ তাঁর ‘আমার গোপন প্রেম’ কবিতায় লিখেছেন- ‘প্রকাশিত প্রেমের তুলনায় অপ্রকাশিত গোপন প্রেমই ভালো/যাকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করবে, তাকে আমি গোপনে ভালোবাসবো/যাকে ভালোবাসি তাকে কখনো তা জানতে দেব না।’ যদিও সব প্রেম গোপনে হয় না, তবে কিছু প্রেম গোপনই থেকে যায়। বিশ্বের অনেক আলোচিত তারকা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন, দেশি-বিদেশি তারকাদের এমন কিছু শোবিজ কাঁপানো প্রেমের কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

উত্তম-সুচিত্রা
মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে তাঁর প্রেমের গুঞ্জন নিয়ে মুখ খুলেছিলেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। হঠাৎ একদিন বেফাঁস কিছু কথা বলে দিয়েছিলেন মহানায়িকা। জানিয়েছিলেন, তাঁদের সম্পর্ক একটা ছিলই। কেমন ছিল সেই সম্পর্ক, জানেন? ‘আমরা গভীরভাবে প্রেমে লিপ্ত ছিলাম...। আজও যেন পর্দার সেরার সেরা জুটি হিসেবেই রয়ে গেছেন তারা। সবটা কি অভিনয় করা যায়? এই প্রশ্ন যে দশকের পর দশক ধরে অস্থির করে তুলেছে বাংলার দর্শককে। একাধিকবার প্রশ্ন উঠেছে, উত্তম-সুচিত্রার কি প্রেম ছিল? ক্যামেরা বন্ধ হলেও কি সেই একই রোমান্টিকতায় ভেসে যেতেন তাঁরা। এর জবাব উত্তম না দিলেও দিয়েছিলেন সুচিত্রা সেন। বহু বছর আগে এক সর্বভারতীয় সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সুচিত্রা বলেছিলেন, ‘আমার উত্তমের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। আমরা খুবই ভালো বন্ধু ছিলাম। কেবল ভালো বললে কম বলা হবে। আমরা গভীরভাবে প্রেমে লিপ্ত ছিলাম।’

রাজ্জাক-কবরী
ষাট দশক থেকে ঢাকাই ছবির সবচেয়ে সফল রাজ্জাক-কবরী জুটি। বলা হয়, বাংলাদেশি সিনেমা জগতের নক্ষত্র প্রেম জুটি রাজ্জাক-কবরী। এই জুটি অভিনীত জনপ্রিয় গান ‘তুমি যে আমার কবিতা’ বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ধ্রুপদী গানের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। তাদের শুরুটা হয়েছিল প্রয়াত নির্মাতা সুভাষ দত্তের হাত ধরে। ১৯৬৮ সালে সুভাষ দত্ত এই জুটিকে নিয়ে নির্মাণ করেন ‘আবির্ভাব’ চলচ্চিত্রটি। প্রথম ছবি দিয়েই বাজিমাত করেন তারা। দর্শকের মনে জায়গা করে নেন রাজ্জাক-কবরী জুটি। এরপর থেকেই তারা জুটি বেঁধে উপহার দিয়েছেন অনেক দর্শকপ্রিয় ছবি। পর্দার রসায়নের বাইরে রাজ্জাক-কবরীর প্রেম নিয়েও গল্প-গুজবের অভাব ছিল না। নিজের ৭৬তম জন্মদিনের প্রারম্ভে ২০১৭ সালের ২২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় গুলশানে নিজের বাসভবন ‘রাজলক্ষ্মী’তে বসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের ছলে কবরীর সঙ্গে ‘প্রেমকথা’ নিয়ে মুখ খুলেছিলেন প্রয়াত নায়করাজ রাজ্জাক। তিনি বলেন, তোমাদের মা-খালাদের কাছে প্রশ্ন কর যে, ‘রাজ্জাক-কবরী’ সম্পর্কে কিছু বল। তারা দেখবে ফিসফিস করে বলছে, ওহ বাবা।

জাফর ইকবাল-ববিতা
‘সুখে থাকো ও আমার নন্দিনী, হয়ে কারো ঘরণী, প্রাসাদেরও বন্দিনী, জেনে রেখো প্রেম কভু মরেনি...’ ভাঙা হৃদয়ে বড্ড অভিমান নিয়ে গানটি কণ্ঠে তুলেছিলেন জনপ্রিয় প্রয়াত নায়ক জাফর ইকবাল। কিন্তু কেন তাঁর এ বিরহ ব্যথা? ১৯৭৫ সালে ইবনে মিজান পরিচালিত ‘এক মুঠো ভাত’ ছবির শুটিং চলছিল। এ ছবিতে জুটি বাঁধলেন জাফর ইকবাল ও ববিতা। তখনই পাঠকপ্রিয় সিনে পত্রিকা চিত্রালীতে দুজনের ঢাউস রোমান্টিক ছবি ছেপে প্রকাশ করা হলো তাঁদের প্রেম কাহিনির গুঞ্জন। ধীরে ধীরে অবস্থা এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, দুজনের সম্পর্ক আর গুঞ্জনে সীমাবদ্ধ থাকেনি। জল গড়ায় বহুদূর। কিন্তু বিধিবাম। এ প্রেম আর পরিণতি পায়নি। কিন্তু কেন এ মধুর সম্পর্ক বিষাদে গড়ায়। যদিও তাঁদের দুজনের কেউ-ই এ নিয়ে কখনো মুখ খোলেননি। এক সময় আলাদাভাবে সংসারীও হন দুজন। তাঁরা প্রায় ৩০টি সিনেমায় জুটি হয়েছিলেন।

অমিতাভ-রেখা
অমিতাভ বচ্চন-রেখার প্রেম কাহিনি ছিল বলিউডের সর্বাধিক চর্চিত ব্যর্থ প্রেমের কাহিনি। বিবাহিত অমিতাভের প্রেমে পড়েছিলেন রেখা। সংবাদমাধ্যমের পাতাতেও উঠে আসত সেসব খবর। এমন সময় রেখা এবং অমিতাভকে নিয়ে মুক্তি পায় ‘মুকাদ্দার কা সিকান্দার’ ছবিটি। এই ছবি মুক্তি পাওয়ার আগেই অবশ্য অমিতাভ এবং রেখার সম্পর্ক নিয়ে কানাঘুষা শুরু হয়ে গিয়েছিল বলিউডের অন্দর মহলে। এসব কিছু অমিতাভের স্ত্রী জয়া বচ্চনের কানে এসেও পৌঁছেছিল। রেখা এবং অমিতাভের এই কাণ্ডে স্বাভাবিকভাবেই মনে মনে বেশ আঘাত পেয়েছিলেন তিনি। জয়ার চোখের জল বাঁধ মানেনি। অমিতাভের পরিবারে অশান্তি শুরু হয়। তার বাবা-মাও রেখার সঙ্গে তার সম্পর্কের বিরোধিতা করতে শুরু করেন। অমিতাভ এরপর রেখাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেন। কিন্তু রেখা তবুও অমিতাভকে ভুলতে পারছিলেন না। এর কয়েকদিন পর রেখা বিস্ফোরক মন্তব্য করে জানান, পরিবার এবং সন্তানের কথা ভেবে অমিতাভ তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাইছেন না।

দিলীপ কুমার-মধুবালা
ষাট দশকে মধুবালা ও দিলীপ কুমারের প্রেম হইচই ফেলে দিয়েছিল। মধুবালার প্রতি দিলীপের প্রেম এতটাই গভীর ছিল যে, মধুবালা তাঁকে ছেড়ে যাওয়ায় নিজেকে বহুদিন ঘরবন্দি করে রেখেছিলেন। সিনেপর্দায় সেই ঐতিহাসিক প্রেমের গান। শিশমহলের কোণায় কোণায় আনারকলি ওরফে মধুবালার সৌন্দর্যের ছটা। আর বারবার উচ্চারিত হচ্ছে, সেই ঐতিহাসিক প্রেমের স্লোগান। ‘পেয়ার কিয়া তো ডরনা কিয়া, পেয়ার কিয়া কোয়ি চোরি নেহি কি’ মুঘল-এ-আজম ছবিতে নিজের প্রেমের ডঙ্কা বাজিয়ে ছিলেন মধুবালা। উল্টো বাবার ভয়ে চুপ করেছিলেন দিলীপ কুমার। সিনেমার পর্দায় ১৯৬০ সালে এমনটা ঘটলেও বাস্তবে কিন্তু অন্য ঘটনাই ঘটে। বাস্তবে দিলীপ নয়, বরং বাবার ভয়ে দিলীপের প্রেম অস্বীকার করেন মধুবালা। কিন্তু দিলীপ দমে যাননি। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েই চিৎকার করে বলেছিলেন, ‘মধুবালা আমি তোমায় ভালোবাসি।’

শাকিব-অপু বিশ্বাস
শাকিব খান-অপু বিশ্বাস ছিল ঢাকাই সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় জুটি। এক সময় সহকর্মী থাকলেও ধীরে ধীরে তাঁদের সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। এরপর বিয়ে, সন্তান আব্রাম খান জয়ের জন্ম। পরবর্তী সময় এসব ঘটনা কেন্দ্র করে বিচ্ছেদ। দুজনার দুটি পথ বেঁকে গেলেও শাকিবকে এখনো হৃদয়ে ধারণ করেন অপু। সন্তান জয়ের সুবাদে শাকিবের পরিবারের সঙ্গেও আছে তাঁর ঘনিষ্ঠতা। সেসব আবার টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে গিয়ে ফলাও করে প্রচারও করেন এই নায়িকা। প্রতিনিয়তই দিয়ে যাচ্ছেন নতুন নতুন তথ্য। মানে ঢালিউডে শাকিব-অপুর প্রেম দর্শকের কাছে মিথ হয়ে আছে।