ছোটখাটো চেহারা। মানুষের হাতের তালুর মধ্যে অনায়াসে এটে যেতে পারে। খুব বেশি হলে ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয় এরা। কথা হচ্ছে ‘অস্ট্রেলিয়ান মাউন্টেন ড্রাগন’কে নিয়ে। বৈজ্ঞানিক নাম রাঙ্কিনিয়া ডাইমেনসিস। লালচে ধূসররঙা এই টিকটিকিগুলি ঈষৎ লাজুক স্বভাবের। লুকিয়ে থাকতেই বেশি পছন্দ করে। বর্তমানে পৃথিবীতে এদের সংখ্যা কতো, তা স্পষ্ট নয়। তবে এটি স্পষ্ট যে এদের সংখ্যা ক্রমশ কমছে। সঙ্কুচিত হচ্ছে এদের বাসস্থানও। উষ্ণায়ন ক্রমশ গিলে খাচ্ছে এদের বাসস্থান। এমন চলতে থাকলে এই টিকটিকিদের ‘বাসযোগ্য’ বলে আর কোনও জায়গা বাকি থাকবে না বলে আশঙ্কা করছেন গবেষকেরা।
অস্ট্রেলিয়ায় ‘লিজার্ড’ গোত্রের বিভিন্ন সরীসৃপ দেখা যায়। তার মধ্যে অন্যতম এই ‘অস্ট্রেলিয়ান মাউন্টেন ড্রাগন’। নামের থেকেই বোঝা যায়, শীতল এবং উঁচু এলাকায় খাপ খাইয়ে নিতে পারে এরা। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া, নিউ সাউথ ওয়েলস এবং তাসমানিয়ায় উচ্চ পার্বত্য এলাকাতেই এদের দেখা মেলে। কিন্তু শুরু থেকে পরিস্থিতি এমন ছিল না। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অতীতে অস্ট্রেলিয়ার নিচু এলাকাগুলোতেও এদের দেখা যেত। দক্ষিণপূর্ব অস্ট্রেলিয়ার ক্যাঙারু দ্বীপ এবং নারাকুর্টে এলাকাতেও বাস ছিল ‘অস্ট্রেলিয়ান মাউন্টেন ড্রাগন’-এর।
ক্যাঙারু দ্বীপ বা নারাকুর্টে কোনটিই খুব বেশি উঁচু এলাকা নয়। ক্যাঙারু দ্বীপের সর্বোচ্চ স্থান বলতে রয়েছে একটি ঢিবি, যেটির উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৩৩৮ ফুট। নারাকুর্টের সর্বোচ্চ স্থান স্টোনি পয়েন্ট। সেটির উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০ ফুটেরও কম। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আজ থেকে প্রায় ২০ হাজার বছর আগে এই নিচু এলাকাগুলিতেও ঘুরে বেড়াত অস্ট্রেলিয়ান মাউন্টেন ড্রাগন।
অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং জার্মানির বার্লিনে প্রাকৃতিক ইতিহাসের জাদুঘরের যৌথ উদ্যোগে এই সরীসৃপদের নিয়ে একটি গবেষণাটি চালানো হয়েছে। জীববিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী ‘কারেন্ট বায়োলজি’তে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। বার্লিনের জাদুঘর থেকে পাওয়া জীবাশ্ম এবং ভিক্টোরিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটে সংরক্ষিত কিছু টিকটিকির নমুনা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন গবেষকেরা।
উভয় ক্ষেত্রে জেনেটিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, উষ্ণায়নের জেরে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই টিকটিকিদের অস্তিত্ব ক্রমশ সঙ্কটের মুখে পড়ছে। আগে অস্ট্রেলিয়ার যে নিচু এলাকাগুলিতে এদের দেখা যেত, এখন সেখানে আর এই টিকটিকিদের অস্তিত্ব নেই। ভিক্টোরিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক জেন মেলভিলের কথায়, গবেষণায় দেখা যাচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই প্রজাতিটির বাসস্থল পাহাড়ের উপরের দিকেই সীমিত হয়ে গিয়েছে। প্রায় ২০ হাজার বছর আগে মাউন্টেন ড্রাগনেরা দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার অনেক বেশি এলাকা জুড়ে বাস করত। এর মধ্যে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার ক্যাঙারু দ্বীপ এবং নারাকুর্টের মতো এলাকাগুলিও ছিল।
মেলভিল জানান, নিচু এলাকায় এই প্রজাতির যে টিকটিকিগুলি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। ভিক্টোরিয়া, নিউ সাউথ ওয়েল্স এবং তাসমানিয়ায় অবশিষ্ট কিছু মাউন্টেন ড্রাগন রয়ে গিয়েছে। কিন্তু তাদের সংখ্যাও অনেক কমে গিয়েছে। অতীতের তুলনায় জিনগত ভাবেও এরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, “যদি বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়ন এ ভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে, তা হলে এই টিকটিকিদের যাওয়ার জন্য আর কোনও জায়গা অবশিষ্ট থাকবে না।”
গবেষণায় উঠে এসেছে, উঁচু শীতল এলাকার বাসস্থানগুলিও এখন উষ্ণায়নের ফলে মাউন্টেন ড্রাগনের বাসস্থান হিসাবে কম উপযুক্ত হয়ে উঠেছে। আর এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। এ ভাবে চলতে থাকলে মাউন্টেন ড্রাগন পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। আরও উদ্বেগের বিষয় হল, মাউন্টেন ড্রাগনের মতো একই ধরনের প্রবণতা দেখা গিয়েছে ‘ব্লচড ব্লু-টাং লিজার্ড’, ‘টিলিকোয়া নিগ্রোলুটিয়া’সহ অন্য বেশ কিছু প্রজাতির মধ্যেও। উষ্ণায়নের প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার এমন বেশ কিছু সরীসৃপের একই পরিণতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গবেষকেরা।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল
 
                         
                                     
                                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        