প্রাচীন মানবদেহের কঙ্কালে গর্ভধারণের হরমোন শনাক্ত করার নতুন উপায় আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই আবিষ্কার প্রত্নতত্ত্ববিদদের এমন নারীদের সম্পর্কে জানাতে সাহায্য করতে পারে, যারা মৃত্যুর সময় গর্ভবতী ছিলেন বা সদ্য সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন।
জার্নাল অব আর্কিওলজিক্যাল সায়েন্স-এ ২ অক্টোবর প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বিজ্ঞানীরা ১,০০০ বছর আগের মানব কঙ্কাল ও দাঁতের নমুনায় গর্ভধারণ–সংক্রান্ত তিনটি প্রধান হরমোন—ইস্ট্রোজেন, প্রজেস্টেরন ও টেস্টোস্টেরন—এর উপস্থিতি শনাক্ত করেছেন।
গবেষণার নেতৃত্বে থাকা যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিদ ড. এমি বারলো বলেন, আমরা কঙ্কাল ও দাঁতের মধ্যে একধরনের সংরক্ষিত হরমোনের ভাণ্ডার খুঁজে পেয়েছি। এটি একেবারে নতুন আবিষ্কার।
তিনি জানান, আগে কখনও দাঁতের আবরণ বা ক্যালকুলাসে এই হরমোনগুলো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এমনকি মানব হাড়ে প্রজেস্টেরন শনাক্ত করাও এই প্রথম।
গবেষকরা সাতজন নারী ও তিনজন পুরুষ কঙ্কালের নমুনা পরীক্ষা করেন, যেগুলোর বয়স প্রথম থেকে উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যে। তারা ব্যবহার করেন ইলাইজা নামের একটি পরীক্ষার পদ্ধতি, যা সাধারণত শরীরে প্রোটিন বা হরমোন শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, হাড়, দাঁতের এনামেল (বাহ্যিক আবরণ), ডেন্টিন ও দাঁতের গোড়ায় থাকা ক্যালকুলাসে তিনটি হরমোনই পাওয়া গেছে। বিশেষ করে দাঁতে প্রজেস্টেরনের উচ্চমাত্রা, হাড়ে ইস্ট্রোজেনের উপস্থিতি এবং টেস্টোস্টেরনের অনুপস্থিতি—সবই মৃত্যুকালে গর্ভধারণের ইঙ্গিত দেয়।
গবেষকেরা বলছেন, এই ফলাফল প্রমাণ করে যে প্রাচীন মানুষের কঙ্কালেও যৌন ও প্রজনন–সংক্রান্ত হরমোন দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে। ভবিষ্যতে এটি নারীদের মাতৃত্বকালীন ইতিহাস জানার গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে উঠতে পারে।
ড. বারলো বলেন, এই পদ্ধতি আরও উন্নত করা গেলে জানা সম্ভব হবে কোনো নারী কত বছর বয়সে প্রথম গর্ভবতী হয়েছিলেন, সন্তান হারানোর ঘটনা ঘটেছিল কি না। এমনকি একাধিক সন্তান জন্মের সময় ব্যবধানও অনুমান করা যাবে।
তবে তিনি জানান, পদ্ধতিটি আরও গবেষণার মাধ্যমে পরিমার্জন করা প্রয়োজন। এজন্য জীবিত ব্যক্তিদের হরমোনের মান ও হাড়ে এর গঠনগত পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করে তুলনামূলক গবেষণা করতে হবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল