কারও বয়স এখন ৬৫ বছর, কারও ৭০ ছুঁইছুঁই। কুমিল্লা মডার্ন প্রাইমারি স্কুল ও জিলা স্কুলে একসঙ্গে পড়েছেন। কেউ চিকিৎসক, কেউবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার, অন্যরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। এ রকম ২০০ মানুষ গড়ে তোলেন বন্ধু ফোরাম কুমিল্লা নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ৫০ বছর আগের সাবেক স্কুল বন্ধুদের সংগঠন শুধু আড্ডা দিয়ে সময় কাটান না। নিজেরা চাঁদা দিয়ে রোগীদের জন্য পানীয় জলের ব্যবস্থা করেন। বন্যার্তদের জন্য চিকিৎসা সহায়তা, খাবার বিতরণ ও ঘর নির্মাণ করেন। গত এক যুগে তারা বিভিন্ন এতিমখানা, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ৫০ লাখ টাকার বেশি দান করেন। সুনামগঞ্জের বন্যায় সেনাবাহিনীর ত্রাণ তহবিলে সাড়ে তিন লাখ টাকা প্রদান করেন। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের সামনে ফোয়ারা ও হাসপাতালের সামনে পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেবিদ্বার থেকে রেহানা বেগম তার বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন। বরুড়া থেকে এসেছেন মনিরুল ইসলাম। তারা বলেন, সবার দাম দিয়ে এত পানি কেনার সামর্থ্য নেই। বন্ধু ফোরামের বিনামূল্যের পানি পেয়ে সবাই উপকৃত হচ্ছেন। ১০ মাস আগে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বুরবুরিয়ায় গোমতীর বাঁধ ভেঙে ঘর পড়ে যায় রিংকু রানী সাহার। তার স্বামী নেই। তিনি দুটি মেয়ে নিয়ে অসহায় অবস্থায় পড়েন। তাদের একটি ঘর করে দেন বন্ধু ফোরাম। এরকম এই গ্রামে ১১টি ঘর করে দেন তারা। ৭০ বছরের বয়সের জাহানারা বেগম বলেন, বন্যায় তাদের ঘর ভেঙে যায়। মালামাল ভেসে যায়। ছেলে জাকির গৃহস্থের কাজ করেন। তেমন আয় নেই। ঘরটি পেয়ে তারা উপকৃত হয়েছেন। বন্ধু ফোরাম কুমিল্লার আহ্বায়ক কাজী ফখরুল আলম বলেন, আমরা সীমিত সামর্থ্য দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সুখ খোঁজার চেষ্টা করেছি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘর নির্মাণ। যখন বাঁধ ভেঙে যায় তখন বন্ধুরা মিলে দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে আসি। সঙ্গে ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক এজেডএম আফজাল জুয়েল, সদস্য ডা. খালেদ মাহমুদসহ অন্যরা। মানুষের অসহায় অবস্থা দেখে আমাদের খারাপ লাগে। বন্ধু ফোরামের বন্ধুরা মিলে ১১ জনকে ঘর নির্মাণ করে দিই।
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, নিজেরা চাঁদা দিয়ে রোগীদের জন্য পানীয় জলের ব্যবস্থা, বন্যার্তদের জন্য চিকিৎসা সহায়তা, খাবার বিতরণ ও ঘর নির্মাণ করে দেয় এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি, যা প্রশংসনীয়।