সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে স্বাক্ষরিত ৩১টি লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) বাতিলের সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পুনর্মূল্যায়নের আহ্বান জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এসব সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের সম্মিলিত উৎপাদনক্ষমতা ৩ হাজার ২৮৭ মেগাওয়াট এবং সম্ভাব্য বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার। বিগত সরকারের সময় এলওআইগুলো কোনো দরপত্র প্রক্রিয়া ছাড়াই প্রদান করা হয়।
সিপিডির মতে, প্রকল্পে বিপুল বিদেশি বিনিয়োগ ও অবকাঠামো ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। তাই নতুন করে দরপত্র আহ্বানের চেয়ে পূর্ববর্তী বিনিয়োগকারীদের সঙ্গেই সমঝোতায় পৌঁছানো অধিক বাস্তবসম্মত হতে পারে।
সিপিডির গবেষণায় বলা হয়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিশেষ আইনের আওতায় ৩১টি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ইস্যু করা হয় লেটার অব ইনটেন্ট (ইচ্ছাপত্র)। তবে পূর্ববর্তী সরকার এগুলো চূড়ান্ত চুক্তিতে না গিয়ে কেবল সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ইচ্ছাপত্রে স্বাক্ষর করেছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এই প্রকল্পগুলো বাতিল করে দেয়।
সিপিডি জানায়, বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করেছেন এবং জমি কিনেছেন। কিন্তু এখন সেগুলো কোনোটিই পুনরুদ্ধার করতে পারছেন না।
প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, 'বেশ কিছু প্রকল্প ২০১৭ বা ২০১৯ সালে শুরু হয়েছিল, তখন সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ছিল অনেক বেশি। এখন বাজার পরিস্থিতি বদলে গেছে। তাই ইচ্ছাপত্রের শর্ত পুনরায় মূল্যায়ন করে বিদ্যুৎ ক্রয়মূল্য এবং খরচ বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।'
তিনি জানান, বিনিয়োগকারীরা ইতোমধ্যেই অনেক ক্ষেত্রে জমি কিনে ফেলেছেন, এমনকি অনেকেই ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বিদেশি ঋণও নিয়েছেন, যার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি মার্কিন ডলার। ফলে এসব বিনিয়োগ এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
গবেষণায় আরও বলা হয়, ৩১টি প্রকল্পের সম্মিলিত উৎপাদন ক্ষমতা ৩,২৮৭ মেগাওয়াট, এবং এতে সম্ভাব্য ৬ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ জড়িত। এসব প্রকল্প বাতিল করায় দেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতও ধাক্কা খাচ্ছে বলে মনে করছে সিপিডি।
গবেষণাপত্রে দীর্ঘায়িত এবং বহু-স্তরীয় অনুমোদন প্রক্রিয়াগুলোকেও দায়ী করা হয়। কারণ এই প্রক্রিয়ায় অনুমোদন পেতে বছরের পর বছর সময় লেগেছিল। অন্যদিকে, ভারতে এটি মাত্র তিন থেকে চার মাস সময় নেয়।
গবেষণাপত্রে সম্পূর্ণ শিল্প স্থাপন প্রক্রিয়ায় বিদেশী বিনিয়োগকারীদের নির্দেশনা দেওয়ার জন্য একটি কেন্দ্রীয় সহায়তা ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়েছে।
পাশপাশি এতে বলা হয়, পিডিবির টেন্ডার প্রক্রিয়া ছোটখাটো কারিগরি ত্রুটি বা ফর্ম্যাটিং ত্রুটির কারণে প্রস্তাব বাতিল করে, এমনকি তা অন্য কোথাও কার্যকর হওয়ার পরেও। অসম্পূর্ণ জমা দেওয়ার বিষয়ে দরদাতাদের অবহিত করার কোনও ব্যবস্থা নেই সেখানে। উপরন্তু, অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে কোনও সক্রিয় দরদাতা হেল্পলাইন বা FAQ বিভাগও নেই।
বাংলাদেশে চাইনিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হান কুন বলেছেন, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতে জমি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিনিয়োগকারীরা যখন জমি কিনে সরকারের বিভিন্ন শাখার অনুমোদন চেষ্টা করেছেন তখন তারা আর্থিক ঝুঁকি নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পগুলো স্থগিত করার সময় এগুলো অনেকটাই চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল। জমি কেনা থেকে শুরু করে শুল্ক আলোচনার পর্যায়েও অনেক প্রকল্প পৌঁছে গিয়েছিল।
চাইনিজ রিনিউয়েবল এনার্জি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল ওয়েইকুয়ান ওয়াং বলেন, চীন একটি বিস্তৃত কাঠামো প্রতিষ্ঠা করেছে যার মধ্যে টেকসই জ্বালানি উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যা দেশের জাতীয় নীতি দ্বারা সমর্থিত।
তিনি আরও বলেন, প্রণোদনা, স্থির শুল্ক কাঠামো, মোট আয়তনের ক্রয় এবং বিশেষ তহবিল নীতিগুলো চীনের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত করেছে।
বিডি প্রতিদিন/তানভীর/আরাফাত