দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ফের আসছে নতুন কারিকুলাম। ২০২৭ সালে এ কারিকুলাম বাস্তবায়ন শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রথমে ষষ্ঠ শ্রেণিতে এ কারিকুলাম চালু করা হবে। পরে ধাপে ধাপে চালু করা হবে অন্য শ্রেণিতেও। তবে নতুন কারিকুলাম প্রণয়নের বিষয়টি একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। দেশে রাজনৈতিক সরকার না থাকায় কারিকুলামে কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে বা কোন পদ্ধতি প্রবর্তন করা হবে তা নিয়েও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব অধ্যাপক মো. সাহতাব উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষাক্রম যাচাইবাছাই করে নতুন কারিকুলাম তৈরি করা হবে। নতুন কারিকুলামে পাঠদান শুরু হবে ২০২৭ সালে। প্রথমে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ও পরে ক্রমে অন্য শ্রেণিতে এই কারিকুলাম চালু করা হবে।
নতুন কারিকুলাম তৈরি নিয়ে নানান অ্যাসেসমেন্ট চলমান রয়েছে। চলতি মাসে কারিকুলাম বিষয়ে একটি কর্মশালা হওয়ার কথা ছিল। সেটি পিছিয়ে আগামী জুলাইয়ে করা হবে বলে জানা গেছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী বছরে রাজনৈতিক সরকারের অধীনেই এ কারিকুলামের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। সরকারের প্রত্যাশা ও নির্দেশনার ওপর নির্ভর করবে শিক্ষা কারিকুলামের অনেক কিছুই।
২০২৩ সালে ঢাকঢোল পিটিয়ে বড় আয়োজনে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল শিক্ষার্থীদের মুখস্থ নির্ভরতা কমিয়ে অভিজ্ঞতা ও কার্যক্রমভিত্তিক শিখনে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে এই কারিকুলাম। বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে হাতেকলমে শেখানো হবে অনেক কিছু। কিন্তু অভিভাবকরা ওই কারিকুলাম স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করতে পারেননি। তাদের অভিযোগ ছিল, এমন কারিকুলামের কারণে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। কারিকুলাম বাতিলে আন্দোলনও হয়।
এরপর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতন হলে বন্ধ হয়ে যায় সেই শিক্ষা কারিকুলাম। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষাব্যবস্থায় প্রবর্তন করা হয় ২০১২ সালের সেই আগের শিক্ষা কারিকুলাম। এক যুগের বেশি সময় আগের প্রণয়ন করা এ কারিকুলাম ফের পরিবর্তন করা হচ্ছে।
এনসিটিবি সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন কারিকুলামে অভিজ্ঞতালব্ধ, জ্ঞাননির্ভর ও বাস্তবসম্মত পাঠদান করা হবে ছাত্রছাত্রীদের। তবে ঠিক কী পদ্ধতিতে পাঠদান বা মূল্যায়ন করা হবে সে ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি এখনো। জানা গেছে, নতুন কারিকুলামের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে নানান অ্যাসেসমেন্ট চলছে। চলতি মাসে এ নিয়ে একটি কর্মশালা ডেকেছিল এনসিটিবি। তবে নানা কারণে এ কর্মশালা করা সম্ভব হয়নি। আগামী জুলাইয়ে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিটিবির এক কর্মকর্তা বলেন, ২০২৩ সালে যে শিক্ষা কারিকুলাম চালু হয়েছিল সেটি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও কিছু বিষয় ছিল যা ছিল সময়োপযোগী। তাই নতুন কারিকুলামে ২০২৩ সালের কারিকুলাম ও ২০১২ সালের কারিকুলামের নানা বিষয়ও থাকতে পারে। তবে ২০২৭ সালে চালু হওয়া কারিকুলামের চরিত্র নির্ভর করবে সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত রাজনৈতিক সরকারের প্রত্যাশার ওপর।
সূত্রটি জানায়, কারিকুলাম নিয়ে নানা আলোচনা আর কর্মশালা শুরু হলেও অন্তর্বর্তী আমলে এই কারিকুলাম করা সম্ভব হবে না। তা ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের কারিকুলাম প্রণয়ন কাজও নয় বলে যোগ করেন তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ