আড়িয়াল বিলে বেআইনিভাবে নির্মিত সব অপরিকল্পিত মাটির বাঁধ অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় পানি ভবনের সম্মেলন কক্ষে 'আড়িয়ল বিল এলাকার জীবনযাত্রার মান এবং পানি ও ভূমি সম্পদের সমন্বিত ব্যবস্থাপনা সমীক্ষা' শীর্ষক প্রকল্পের ফলাফলের উপর অনুষ্ঠিত এক জাতীয় কর্মশালায় মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসককে তিনি এ নির্দেশ দেন।
উপদেষ্টা বলেন, যে বাঁধগুলো লোকজন চলাচলের জন্য করেছে, ওখানে বাঁধগুলো কেটে দিয়ে খালের ওপর বাঁশের পথ করে দিতে হবে। এছাড়া আড়িয়াল বিলের ভিতরে খালের ওপর দেয়া অবৈধ মাটির বাঁধ অপসারণ করে মানুষের চলাচলের জন্য কিছু ছোট ছোট সেতু অল্প সময়ের মধ্যে নির্মাণ করে দেয়ার জন্য সড়ক বিভাগকে আমরা অনুরোধ করবো।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আড়িয়াল বিলকে আমাদের একটা জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। বিলটিকে হয় একটা জলাভূমিকেন্দ্রিক সংরক্ষিত এলাকা অথবা বিশেষ জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ এলাকা ঘোষণা করা হবে। একটা প্রটেকশন স্ট্যাটাস বা সংরক্ষিত মর্যাদা না দেয়া পর্যন্ত এই বিলের ধ্বংসযজ্ঞটা আমরা কমাতে পারবো না। বেলাই বিল এবং চলন বিলকেও জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে আমাদের বিবেচনা করতে হবে।
তিনি বলেন, নদ-নদীকে নষ্ট করে আমরা উন্নয়ন করতে পারি না। দরকার হলে আমরা অনেক দূর ঘুরে যাব কিন্তু খাল বা নদীর উপর বাঁধ দিয়ে যাওয়ার যে প্রবণতা এ জায়গা থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। উপদেষ্টা আড়িয়াল বিলে মৎস্য অধিদফতর কর্তৃক নির্মিত ৮টা বন্ধ খাল যেগুলো ক্লোজার করে রাখা হয়েছে সেগুলো পর্যালোচনা করে খুলে দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসন, মৎস্য অধিদফতর এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সমন্বিতভাবে কাজ করা নির্দেশনা প্রদান করেন।
পানি সম্পদ উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আগামী এক মাসের মধ্যে আড়িয়াল বিল সম্পর্কে একটি কর্মপরিকল্পনা জমা দেয়ার নির্দেশনা প্রদান করেন এবং সেই সাথে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, আড়িয়াল বিলকে আমরা একটা প্রটেক্টেড এরিয়ার মর্যাদা দিয়ে, দাগ- খতিয়ান ধরে একটা গেজেট করে দেবো।
উপদেষ্টা বলেন, আড়িয়াল বিলে কিছুটা ড্রেজিং করার দরকার হলে তাও করা সম্ভব। বিলের ৫৩৯০ হেক্টরের মধ্যে সরকারের খাস খতিয়ানে থাকা ৭১.৭৭ হেক্টরকে বিশেষ জীববৈচিত্র এলাকা বা সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করা যেতে পারে। আড়িয়াল বিল রক্ষার মডেলটা আমরা বেলাই বিল এবং চলন বিলের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করব।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আড়িয়াল বিলে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় গরীব কৃষক যেন উপকৃত হয় সে বিষয়টি আমাদের কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখতে হবে।
অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, আড়িয়াল বিল এলাকায় পানির মাধ্যমে নদীমাতৃক যোগাযোগ কিভাবে গড়ে তোলা যায় এ বিষয়ে আমাদের যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। আড়িয়াল বিলে পরিবেশ রক্ষা করে মানুষ এবং প্রকৃতির উপকারে আসবে সেই পদক্ষেপ আমাদের গ্রহণ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য রাখেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল হাসান। এছাড়া স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদফতরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ হাবীবুর রহমান।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত