ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটির প্রাক্কালে দেশের আন্তঃব্যাংক কল মানি মার্কেটে স্থিতিশীলতা লক্ষ্য করা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সময়োপযোগী তারল্য সহায়তার ফলে ব্যাংকগুলো তাদের প্রয়োজনীয় নগদ অর্থ ব্যবস্থাপনায় সফল হয়েছে।
গত বুধবার কল মানির গড় হার সামান্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০.৪৪ শতাংশে, যা আগের দিন ছিল ১০.৩৯ শতাংশ। এক সপ্তাহ আগে এ হার ছিল ১০.০৬ শতাংশ বলে জানা গেছে।
যদিও কল মানির সুদের হার ৯.৯০ থেকে ১১.৫০ শতাংশের মধ্যে থাকছে, অধিকাংশ লেনদেন ১০.০০ থেকে ১০.৫০ শতাংশের মধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে, যা বাজারে একটি স্থিতিশীল অবস্থা নির্দেশ করে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বড় ধর্মীয় উৎসবের আগে সাধারণত নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে যায়, যার প্রভাবে হারে সামান্য ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। তবে, বুধবার কল মানি মার্কেটে মোট লেনদেন কমে দাঁড়িয়েছে ৩১,২৫০ কোটি টাকায়, যা আগের দিনের তুলনায় (৪৪,৭১০ কোটি টাকা) এবং এক সপ্তাহ আগের তুলনায় (৩৬,০৯০ কোটি টাকা) কম।
ঢাকার মতিঝিল, দিলকুশা ও অন্যান্য বাণিজ্যিক এলাকায় ব্যাংক শাখাগুলোতে গ্রাহকদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেলেও তারল্য ব্যবস্থাপনা ছিল নিয়ন্ত্রণে।
এক বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান জানান, “ঈদের ছুটির আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় বেশিরভাগ ব্যাংকই কার্যকরভাবে তাদের তারল্য ব্যবস্থাপনা করতে পেরেছে।” তিনি জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেপো ও বিশেষ সুবিধার মাধ্যমে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সরবরাহ করা হয়েছে।
তবে নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় নতুন নোট সরবরাহে কিছু ব্যাংক সমস্যায় পড়লেও, বাংলাদেশ ব্যাংক সকল বাণিজ্যিক ব্যাংককে ঈদের ছুটির সময় বিকল্প ব্যাংকিং চ্যানেলগুলো সচল রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
এসব চ্যানেলের মধ্যে রয়েছে—এটিএম, পয়েন্ট-অব-সেল, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ও অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম।
এক শীর্ষস্থানীয় বাজার বিশ্লেষক বলেন, “নগদের ওপর চাপ ধীরে ধীরে কমছে, কারণ এখন অনেকেই ডিজিটাল লেনদেনের ওপর নির্ভর করছেন।” তিনি আরও জানান, বর্তমানে দেশে ৪.১ কোটির বেশি ডেবিট কার্ড এবং ২৫.৭ লাখের বেশি ক্রেডিট কার্ড চালু রয়েছে।
এছাড়া মোবাইল মানি, এজেন্ট ব্যাংকিং ও অনলাইন ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তা ক্রমাগত বাড়ছে, বিশেষ করে উৎসবকালীন সময়ে।
ঈদুল আজহা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব, যা আগামী ৭ জুন (শনিবার) উদযাপিত হবে। এ উপলক্ষে ৫ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত সব তফসিলি ব্যাংক বন্ধ থাকবে। তবে রপ্তানি-আমদানি কার্যক্রম এবং শিল্প অঞ্চলের শ্রমিকদের বেতন প্রদানে সহায়তা দিতে ৫, ১১ ও ১২ জুন নির্ধারিত এলাকায় সীমিত আকারে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু থাকবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের প্রত্যাশা, ঈদের পর কল মানি রেট কিছুটা কমতে পারে যদি তারল্য পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকে এবং চাহিদা হ্রাস পায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “ঈদের পর চাহিদা কমলে এবং তারল্য প্রবাহ ঠিক থাকলে কল মানি রেট কিছুটা হ্রাস পেতে পারে।”
ডিজিটাল লেনদেনের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সক্রিয় সহায়তায় বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা উৎসবকেন্দ্রিক তারল্য চাপে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন