২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের কথা স্মরণ করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, আমাদের ফিরে তাকাতে হবে সেইসব দিনের দিকে, যখন সারা দেশে নেমে এসেছিল নৈরাজ্য। আদালত থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো চলে গিয়েছিল একটি গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। সেই সময় জনগণ রাস্তায় নেমে স্লোগান তোলে ‘আমরা ন্যায়বিচার চাই।’ এই স্লোগান ছিল আদালতের বাইরের এক গণরায়। এই আন্দোলনই বিচার বিভাগের ভীত নাড়িয়ে দেয়।
বুধবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। সম্প্রতি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াডহ্যাম কলেজ থেকে আজীবন অনারারি ফেলোশিপ অর্জন করেন প্রধান বিচারপতি। এই অর্জনকে কেন্দ্র করে এই সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।
সমিতির শহিদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে আয়োজিত এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামন, সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বারের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মিলন।
এসময় প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ন্যায় বিচার কোন গন্তব্য নয়, এটি একটি নিয়মিত অনুশীলন। প্রতিদিন আমাদের বিবেক, আত্মত্যাগ এবং বিনয়ের মাধ্যমে এই অনুশীলনকে নবায়ন করতে হবে।
তিনি বলেন, যে আন্দোলনের মাধ্যমে এই সুপ্রিম কোর্টের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। বরং সেটি ছিল এক নবজাগরণের সূচনা, যা আমাদের নতুন উদ্যমে এগিয়ে চলার প্রেরণা জুগিয়েছে এই আন্দোলন।
সংবর্ধনার জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, এই সম্মান শুধু একজন ব্যক্তির নয়, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, সত্যের পথে হেঁটেছে এবং ন্যায়ের জন্য লড়েছে, সেই জাতির।
২০২৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর নিজের ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কার রোড ম্যাপের কথা উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ইতিমধ্যে গঠন করা হয়েছে বিচারপতি নিয়োগ কাউন্সিল ও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল, যা রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত থেকে বিচারপতি নিয়োগ ও অপসারণ করবে। পৃথক সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় আইনের খসড়াও তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, রাজধানীসহ দেশের সাতটি বিভাগ ঘুরে আমি বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের জরুরি বার্তা পৌঁছে দিয়েছি। বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেট এবং আইন পেশার সদস্যদের কাছে আহ্বান জানিয়েছি তারা যেন এই যৌথ দায়িত্বকে নিজের বলে গ্রহণ করেন। এই যাত্রায় আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরাও আমাদের পাশে রয়েছেন।
সংস্কারে বারকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, বেঞ্চের (আদালত) একার পক্ষে সংস্কার করা সম্ভব নয়। বারকেও (আইনজীবী সমিতি) দায়িত্ব নিতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির উচিত হবে বিচার সংস্কার যাত্রায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করা।
তিনি বলেন, আগামী ২২ জুন সুপ্রিম কোর্টের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে বিচার সংস্কার বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন (প্লেনারি সেশন)। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। অনুষ্ঠানটি শুধু একটি সভা নয়, এটি হবে একটি ঐতিহাসিক মোড়।
বিডি-প্রতিদিন/শআ