পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ঢাকার কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা খালের প্রাণ প্রবাহ ফিরিয়ে আনা হবে। জনগণের টাকায় সরকার শতকোটি টাকা ব্যয় করে এই খালটা যখন পুঃখনন করে দেবে, জনগণ যেন তখন এই খালটাকে আর নোংরা না করেন। তিনি খালটির প্রাণ প্রবাহ ঠিক রাখতে এখানকার ওয়ার্ড ভিত্তিক, মহল্লা ভিত্তিক জনগণের একটা মনিটরিং মেকানিজম তৈরি করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
তিনি বলেন, এ খালটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এজন্য যে এ খালের সাথে ২টা বড় নদীর সংযোগ রয়েছে। একটা হচ্ছে বুড়িগঙ্গা আর আরেকটা হচ্ছে শীতলক্ষ্যা নদী।
সোমবার সকালে ঢাকার কেরানীগঞ্জে শুভাঢ্যা খাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সরকার তখনই আপনার জন্য কাজ করবে যখন আপনি নিজে সজাগ হবেন। সরকার যতই কাজ করে দিক না কেন সকল গার্মেন্টসের মালিক যদি মনে করে যে তারা তাদের সমস্ত ঝুট কাপড় এখানে ফেলবে, পৌরসভা যদি মনে করে যে তার যত বর্জ্য আছে সে এখানে ফেলবে তাহলে আর শতকোটি টাকার প্রকল্প দিয়েও কোনো কাজ হবে না বলে তিনি এক প্রশ্নের উত্তরে উল্লেখ করেন ।
তিনি আরও বলেন, খালটা আমার দেখতে আসার কারণ হলো যে এ খালটি পুনঃখননের জন্য যে প্রকল্পটা পাস করা হয়েছে সে প্রকল্পটা কতটুকুন যৌক্তিক, এটার যে ব্যয় ধরা হয়েছে সেটা কতটুকুন যৌক্তিক এটা দেখতে আসা। প্রকল্পের আওতায় ১৪.২৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ শুভাঢ্যা খাল পুনঃখনন ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করা হবে।
রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, এখানে এসে যা দেখলাম এখানে খালটাই আবার অনেক জায়গায় নতুন করে খনন করতে হবে, এখানে খালের প্রবাহ বলতে আসলে কিছু নেই এবং এখানে কেবল যে খাল খনন করতে হবে তা না, এখানে খালের পাড় বাঁধাইয়ের ব্যাপার আছে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যাপার আছে।
তিনি বলেন, খালের পাশে হাঁটার রাস্তা করে না দিলে এখানে আবারও খাল দখল হয়ে যেতে পারে। এখানে এসে যেটা শুনলাম এখন যে কাজটা করা হচ্ছে খালের মাটি কাটার কাজ অর্থাৎ খননের কাজ এটা হচ্ছে সিটি জরিপ অনুযায়ী। প্রকল্পে আসলে আছে সিএস জরিপ অনুযায়ী। সিএস জরিপ অনুযায়ী খালটা অনেক বেশি প্রশস্ত। সেজন্য আমার উপলব্ধিটা নিজে বুঝবার জন্য এখানে এসেছি।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, এ খালটাতে পানির প্রবাহ ফেরত আনা এটা একটা চ্যালেঞ্জিং কাজ। এখন তো খালের ওপর আমি শুধুমাত্র প্লাস্টিক আর ময়লা-আবর্জনা দেখে আসলাম।
তিনি বলেন, এ প্রকল্পটা এ জন্যই এই জুনে শুরু হয়ে আগামী জুন-জুলাইয়ে যখন শেষ হবে তখন অন্তত খালের অবয়বটা আপনারা দেখতে পাবেন।
উপদেষ্টা সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, এখানে জেলা প্রশাসনের যে সকল স্থাপনা গুলো এ খালের মধ্যে আছে তাদেরকে স্থাপনাগুলো সরিয়ে নিতে ইতোমধ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের উদ্যোগের কথা বলতে গিয়ে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা যদি ঢাকার খালগুলোর নিচটা গভীর করে দেই, ড্রেনগুলো পরিষ্কার করে দেই, তাহলে আশা করি এবার জলাবদ্ধতা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম হবে।
তিনি বলেন, যদি জলাবদ্ধতা কোনো জায়গায় হয়েও থাকে, তবে সিটি কর্পোরেশনের লোকজন মাঠে থাকবে, ড্রেন পরিষ্কার করে বা দরকার হলে পাম্প করে নগরবাসীকে এবার জলবদ্ধতা থেকে মুক্তি দেবে।
ঢাকা শহরে বৃক্ষরোপন বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, ঢাকা শহরে গাছ লাগানোর জায়গা খুব কম। একটা সমাধান হচ্ছে খাল গুলোর পাড়ে গাছ লাগিয়ে দেয়া। সিটি কর্পোরেশনগুলো সে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে এবং সেখানে বন বিভাগ সহায়তা দিচ্ছে, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও সহায়তা দিচ্ছে এবং আমাদের চিন্তাটা হলো কমিউনিটিকে সাথে নিয়ে বৃক্ষরোপণটা আমরা করবো যাতে করে কমিউনিটিরও একটা মায়া থাকে, তারা যেন গাছের দেখাশোনা করেন।
এ সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান, পানি উন্নয়ন বোর্ড পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. এনায়েত উল্লাহ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পরিকল্পনা মো. মোবাশশেরুল ইসলাম, পানি উন্নয়ন বোর্ড ঢাকা অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. রাফিউজ সাজ্জাদ, নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত-সহ ঢাকা জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত