ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসির ঢাকা সফরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল দুই সরকারের মধ্যে ‘অভিবাসন ও গতিশীলতা’ সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর।
মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক যৌথ বিবৃতিতে একথা বলা হয়েছে।
ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আজ তার দুই দিনের সফর শেষ করেছেন, যা পারস্পরিক শ্রদ্ধা, অভিন্ন মূল্যবোধ ও স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ ও ইতালির মধ্যকার দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতার বন্ধনের পুনর্নিশ্চয়তা হিসেবে চিহ্নিত।
সফরকালে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং পিয়ান্তেদোসি তাদের নিজ নিজ সরকারের পক্ষে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের জন্য এই সমঝোতা স্মারক বিদেশে শ্রম বাজার সম্প্রসারণ, রেমিট্যান্স প্রবাহ নিশ্চিতকরণ ও বৈধ অভিবাসন পথের মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে। এছাড়াও ইতালির জন্য এটি নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও নিয়মিত অভিবাসনকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি শ্রমিক ঘাটতির চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধান প্রদান করে।
এই সমঝোতা স্মারকটি ২০১৭ সালে বাংলাদেশ এবং ইইউ’র মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘অনুমোদন ছাড়া ব্যক্তিদের সনাক্তকরণ ও প্রত্যাবর্তনের জন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি)’ এর বিধান অনুসারে যৌথভাবে এবং আরও কার্যকরভাবে অনিয়মিত অভিবাসন মোকাবিলায় সহায়তা করবে।
সফরের সময় উভয় পক্ষ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবস্থা পর্যালোচনা করে এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা, অভিবাসন ব্যবস্থাপনা, আইন প্রয়োগকারী সহযোগিতা, সুগম ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থা ও ইতালিতে বাংলাদেশি প্রবাসীদের কল্যাণসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।
উভয় পক্ষই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক উন্নয়ন ও তাদের জনগণের কল্যাণের জন্য পারস্পরিক সহযোগিতার অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে বাংলাদেশ এবং ইতালির অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটায়। উভয় পক্ষই দ্রুততম সময়ে ইতালির সরকার প্রধানের বাংলাদেশ সফর আয়োজনের বিষয়ে একমত হয়েছেন।
অর্থনীতি স্থিতিশীলকরণ ও প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার জন্য প্রচেষ্টা এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের উদারভাবে আতিথেয়তার জন্য ইতালির মন্ত্রী বাংলাদেশের প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশ পক্ষ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক ফোরামে ইতালির অব্যাহত সমর্থনের কথা স্বীকার করে।
সফরকালে ইতালির মন্ত্রী প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং স্বরাষ্ট্র ও কৃষি বিষয়ক উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে পিয়ান্তেদোসি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক সংস্কারের জন্য এর উদ্যোগের প্রতি ইতালির অব্যাহত সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন, যা ২০২৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির প্রতিশ্রুতির প্রতিধ্বনি।
ইতালিকে বাংলাদেশের একটি মূল্যবান অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন, যার মধ্যে রয়েছে বৃহত্তর বাজার প্রবেশাধিকার, ব্যবসা-বাণিজ্য অংশীদারিত্ব এবং বস্ত্র, চামড়া, তথ্য প্রযুক্তি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের মতো খাতে যৌথ উদ্যোগ।
তিনি উদ্ভাবন, জলবায়ু পরিবর্তন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক বিনিময়, অভিবাসন এবং জনগণের সাথে জনগণের সংযোগ, বিশেষ করে যুবসমাজের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর ও সুদৃঢ় করার ওপর জোর দেন।
সূত্র : বাসস।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত