যুক্তরাজ্যে প্রায় এক কোটি মানুষ মাইগ্রেন রোগে আক্রান্ত। এই দীর্ঘস্থায়ী অসুখ শুধু মাথাব্যথাই নয়, জীবনযাত্রা ও পেশাগত ক্ষেত্রেও ফেলছে বড় প্রভাব। ফলে সোশ্যাল মিডিয়ায় যখনই কোনো নতুন 'টিপস' বা 'হ্যাক' ভাইরাল হয়, অনেকেই সেই পদ্ধতি আজমাতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
সাম্প্রতিক ভাইরাল একটি ট্রেন্ডের নাম—‘ম্যাকমাইগ্রেন মিল’। এতে বলা হচ্ছে, একটি ফুল-ফ্যাট কোক ও এক প্যাকেট লবণযুক্ত ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খেয়ে অনেকেই সাময়িকভাবে মাইগ্রেনের কষ্ট থেকে মুক্তি পাচ্ছেন।
অক্সফোর্ডশায়ারের বাসিন্দা নিক কুক জানান, “আমার কাছে সবসময় মাইগ্রেনের ওষুধ থাকে। তবে কোক খেলে মাঝেমধ্যে উপকার মেলে। বিশেষ করে চোখ ঝাপসা হওয়ার মুহূর্তে সময়মতো কোক খেলে কিছুটা স্বস্তি আসে।” তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “এটি আমার মূল চিকিৎসার বিকল্প নয়, বরং সময় পার করার একটি উপায়।”
২৭ বছর বয়সী কায়লি ওয়েবস্টার বলেন, এই পদ্ধতির পেছনে লবণের ভূমিকা থাকতে পারে বলে তার ধারণা। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “মাইগ্রেন কোনো স্ন্যাকস দিয়ে সারানো সম্ভব নয়। এটি একটি জটিল নিউরোলজিক্যাল সমস্যা।”
বিশিষ্ট নিউরোলজিস্ট ডা. কাই কেনিস বলেন, “কোকের ক্যাফেইন কিছু মানুষের স্নায়ুতে সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে, ফলে মাথাব্যথা কমে। কিন্তু বিপরীতে এই **একই ক্যাফেইন অনেকের জন্য মাইগ্রেন ট্রিগারও করতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, ‘টাইরামিন’ নামে একটি যৌগ, যা প্রক্রিয়াজাত ফাস্টফুডে পাওয়া যায়, সেটিও অনেক সময় মাইগ্রেনের জন্য দায়ী।
মাইগ্রেন নিয়ন্ত্রণে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনেছেন এলোইজ আন্ডারউড। তিনি বলেন, “ভুল টিপসের পিছনে না ছুটে আমি ঘরে বসে ফুল ফ্রেমিং ব্যবসা করছি। শরীর-মন শান্ত রাখতে গরম পানি, আই মাস্ক, বিশেষ ইয়ারবাড ও ফ্যান ব্যবহার করি।”
নিউরোলজিস্ট প্রফেসর পিটার গোডসবি জানান, “‘জেপান্টস’ নামের নতুন একটি ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে, যা মাইগ্রেনের আগেই ব্যথা বন্ধ করতে সক্ষম হতে পারে। এটি মাইগ্রেন রোগীদের জন্য আশাজাগানিয়া।”
তিনি আরও বলেন, “টিকটকের কথায় কান না দিয়ে শরীরের বার্তা শুনুন। অতিরিক্ত ক্ষুধা, ঘুমঘুম ভাব, মেজাজ পরিবর্তন, লবণ-চিনির প্রতি আকর্ষণ— এগুলো মাইগ্রেনের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। সময় থাকতে ব্যবস্থা নিন।”
নিক কুক শেষমেশ বলেন, “আমার জীবন মাইগ্রেনকে ঘিরেই চলে। বন্ধুদের মতো রাতে মদ খেতে পারি না। ঘুরতে গেলেও নিজের বালিশ, ফল আর উইটাবিক্স সঙ্গে রাখি। কারণ ক্ষুধা আমার সবচেয়ে বড় ট্রিগার।”
সোর্স: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/আশিক