স্থাপত্যের বিস্ময় আইফেল টাওয়ার। প্যারিস নামটাই যেন স্বপ্নে ভেসে থাকা এক শহর। কেউ বলেন ভালোবাসার নগরী। কেউ বলেন শিল্প-সংস্কৃতির রাজধানী। এই শহরের মাঝখানে আকাশচুম্বী এক স্থাপনা- আইফেল টাওয়ার।
১৮৮৯ সালে ফ্রান্সে বিশ্বমেলার মূল আকর্ষণ হিসেবে তৈরি করা হয় আইফেল টাওয়ার। ফরাসি প্রকৌশলী গুস্তাভ আইফেল-এর নকশায় গড়ে ওঠা এই টাওয়ার প্রথম দিকে প্যারিসবাসীর কাছে তেমন জনপ্রিয় ছিল না। অনেকেই একে ‘লোহার দৈত্য’ বলে বিদ্রুপ করতেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সেই সমালোচনাই পরিণত হয় শ্রদ্ধায়। আইফেল টাওয়ার হয়ে ওঠে ফরাসি গর্বের প্রতীক। প্রায় ১০ হাজার টন লোহা ও ২৫ লাখ রিভেট দিয়ে তৈরি এই টাওয়ারের উচ্চতা ৩৩০ মিটার। ১৯৩০ সালে নিউইয়র্কের ক্রাইসলার বিল্ডিং তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এটিই ছিল বিশ্বের সর্বোচ্চ স্থাপনা।
আইফেল টাওয়ারের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৮৮৭ সালে। দুই বছর পাঁচ মাসে ৩০০ জন শ্রমিকের অক্লান্ত পরিশ্রমে দাঁড়িয়ে যায় টাওয়ারটি। কোনো আধুনিক যন্ত্র ছাড়াই, কেবল ম্যানুয়াল যন্ত্রপাতি ও ধাতব কাঠামোর সমন্বয়ে তৈরি হয় এই প্রকৌশল বিস্ময়। আজও টাওয়ারটি প্রতি সাত বছর পরপর নতুন করে রং করা হয়। এতে লাগে প্রায় ৬০ টন রং!
দিনের আলোয় আইফেল টাওয়ারের রূপ অন্যরকম। সূর্যের আলোয় চকচকে লোহার কাঠামো যেন শক্তি ও স্থিতির প্রতীক। কিন্তু সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে যখন টাওয়ার জুড়ে জ্বলে ওঠে লাখো আলো, তখন পুরো প্যারিস শহরই যেন নতুন এক রূপকথায় ঢেকে যায়। সন্ধ্যায় দেখা যায় চারপাশে ভিড়- কেউ প্রেমিকাকে ফুল দিচ্ছে, কেউ আবার পরিবারের সঙ্গে ছবি তুলছে। রাত ৮টা বাজতেই টাওয়ারে জ্বলে ওঠে স্পার্কলিং লাইট- ঠিক পাঁচ মিনিটের সেই দৃশ্য দর্শকদের মুগ্ধতায় স্তব্ধ করে দেয়। মনে হয়, স্বপ্নের কোনো পরী নগরী চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠেছে।