নগর জীবনের ক্রমবর্ধমান মানসিক চাপ ও স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা মাথায় রেখে রাজধানীর অভিজাত আবাসিক এলাকা বসুন্ধরার বাসিন্দাদের জন্য বিনামূল্যে ইয়োগার (যোগব্যায়াম) সুযোগ নিয়ে এসেছে গোল্ড’স জিম বাংলাদেশ। বসুন্ধরা গ্রুপের উদ্যোগে গতকাল সকালে বসুন্ধরা স্পোর্টস সিটিতে এ কমিউনিটি ইয়োগার উদ্বোধন করা হয়। প্রথম দিনেই শতাধিক নবীন-প্রবীণের অংশগ্রহণে প্রাণবন্ত মিলনমেলায় পরিণত হয় ইয়োগা সেশন। যারা সকালের সেশনে হাজির হতে পারেননি, তারা যোগ দেন সন্ধ্যার সেশনে।
শুক্রবার ছুটির দিনের ভোরেই শরতের শুভ্র আকাশে দানা বাঁধে মেঘ। হানা দেয় বৃষ্টি। সেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল সাড়ে ৬টার আগেই বসুন্ধরা স্পোর্টস সিটিতে হাজির হন আবাসিক এলাকার বিভিন্ন ব্লকের শতাধিক বাসিন্দা। যোগ দেন ইয়োগা সেশনে। অংশগ্রহণকারীদের জন্য ছিল উষ্ণ অভ্যর্থনা, টি-শার্ট ও হালকা নাশতার আয়োজন। প্রথম দিনের সকালের সেশন পরিচালনা করেন অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু ও নাসির উদ্দিন খান।
কন্যাকে নিয়ে ইয়োগা সেশনে যোগ দেওয়া অর্থোপেডিক চিকিৎসক ডা. জুয়েল বলেন, উদ্যোগটা খুবই ভালো। ব্যায়াম হলো ফিজিক্যাল মেডিসিন। এর ওপরে ভালো কোনো ওষুধ নেই। নিয়মিত ইয়োগা করলে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট, কোমর, মেরুদণ্ড, হাঁটু ঘাড়ের ব্যথার জন্য ওষুধ খেতে হবে না। হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানি সাইনাসের সমস্যা দূরে থাকবে। আমরা সুস্থ থাকব। আর আমরা সুস্থ থাকলে বাংলাদেশ ভালো থাকবে।
এইচ ব্লক থেকে আসেন মেহেদী-তাসলিমা দম্পতি। ইয়োগা সেশন শেষে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তারা বলেন, বাসিন্দাদের জন্য চমৎকার একটি উদ্যোগ নিয়েছে বসুন্ধরা। এবারই প্রথম তারা কোনো ইয়োগা সেশনে অংশ নিয়েছেন। চমৎকার পরিবেশ। শত শত মানুষের সঙ্গে একসঙ্গে ব্যায়াম করার কারণে মোটেও একঘেয়েমি লাগেনি। এম ব্লকের বাসিন্দা একটি মোবাইল অপারেটরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার মোর্শেদ বলেন, এত সুন্দর উদ্যোগের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ। এখানে ইন্সট্রাক্টররা যেভাবে ব্যায়ামগুলো দেখিয়েছেন, তা খুবই কার্যকর মনে হয়েছে। সুস্থ প্রজন্ম, সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে খেলাধুলা, শরীরচর্চার বিকল্প নেই। এটা অনেক বড় একটা সুযোগ। সবার উচিত সন্তানদের নিয়ে আসা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বসুন্ধরা গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (বিক্রয় ও বিপণন) বিদ্যুৎ কুমার ভৌমিক বলেন, ইয়োগা শুধু শরীরকে সুস্থ রাখে না, উদ্বেগ দূর করে মানসিক প্রশান্তি আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একটি সুস্থ ও সচেতন কমিউনিটি গড়ে তোলার স্বপ্ন থেকে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ আয়োজন। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল বৃহৎ পরিসরে ইয়োগার ব্যবস্থা করা। সেই যাত্রা শুরু হলো।
বসুন্ধরা স্পোর্টস সিটির ইনচার্জ মেজর মো. মহসিনুল করিম বলেন, প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা (বাদ মাগরিব) থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত দুই সেশনে ইয়োগার আয়োজন থাকবে। আমরা শিগগিরই টেলিভিশন ও ইউটিউবের মাধ্যমে ইয়োগা সেশন সরাসরি সম্প্রচার শুরু করব। তখন ইয়োগা ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে। এ উদ্যোগ কেবল বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকবে না; শিগগিরই এটি সারা দেশে এক স্বাস্থ্যবিপ্লবে রূপ নেবে।
ইয়োগার মোট আটটি শাখা থাকলেও বিশ্বব্যাপী আসন (শারীরিক ব্যায়াম), প্রাণায়াম (শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ) ও ধ্যান (মেডিটেশন) সবচেয়ে জনপ্রিয়। নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে এগুলো শরীর ও মনকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি জীবনযাত্রায় প্রশান্তি আনে। ইয়োগা এখন বিশ্বব্যাপী একটি আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপের এ উদ্যোগ দেশে স্বাস্থ্যসচেতন সংস্কৃতি গড়ে তুলতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা।