ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়ার ৭টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৬টিতে চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর পরেই জেলা জুড়ে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে বাঁধভাঙা আনন্দ-উল্লাস শুরু হয়েছে। বগুড়ার দুটি গুরুত্বপূর্ণ আসনে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করায় স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। নেতাকর্মীরা নতুন আমেজে মাঠ গোছানো শুরু করেছেন। আসনগুলোতে ধানের শীষে ভোট চেয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণা। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে চাইছেন দোয়া।
বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা জানান, এই মনোনয়ন বগুড়ার সর্বস্তরের মানুষের জন্য খুশির সংবাদ। এই খবর পাওয়ার পরপরই তারেক রহমানকে টেলিফোন করে বগুড়াবাসীর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। তিনি বগুড়াবাসীর কাছে দোয়া ও ভোট প্রার্থনা করেছেন।
সোমবার (৩ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭টি আসনে চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঘোষণার পরপরই বগুড়ায় জেলা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো আনন্দ মিছিল ও সমাবেশ করে। মিছিলে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থকরা অংশ নেন।
জানা গেছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়ার ৭টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৬টিতে চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এরমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুটি আসন বগুড়া-৬ (সদর) দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাহজাহানপুর) আসনে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। দলের পক্ষ থেকে এমন আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর থেকেই বগুড়া জুড়ে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস শুরু হয়েছে। বগুড়ায় বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মনোনয়নে নেতাকর্মী ও সমর্থদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে।
তারা বলছেন, দীর্ঘ ১৭ বছর পর সাধারণ জনগণ তাদের ভোটাধিকার ফিরে পেয়েছেন। বগুড়ার অন্য আসনে যারা বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন তারা হলেন-বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনে সাবেক এমপি কাজী রফিকুল ইসলাম, বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনে আব্দুল মুহিত তালুকদার, বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে সাবেক এমপি আলহাজ্ব মোশারফ হোসেন, বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে সাবেক এমপি গোলাম মোঃ সিরাজ।
তবে বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে কোন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, নাগরিক ঐক্য’র সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থী করা হবে। ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না এর আগে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আন্দোলনে লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। তিনি বিএনপি জোট থেকে আরেকবার শিবগঞ্জ আসনে মনোনীত হয়েছিলেন। সেই সময় সরকার পক্ষের জোটের নেতারা তাকে ভোট করতে বাধা দেন। তাই এবার বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসন থেকে তাকেই মনোনয়ন দিবেন এমন দাবি করেছেন নাগরিক ঐক্য’র জেলার নেতৃবৃন্দ।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান হওয়ায় বরাবরই বগুড়া বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ১৯৯১ সাল থেকে এই জেলার দুটি আসনে (বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭) নির্বাচনে অংশ নিয়ে কখনো পরাজিত হননি। ঐতিহ্যবাহী এই নির্বাচনী এলাকায় এবার তাঁর সঙ্গে পুত্র তারেক রহমানের মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
মনোনয়ন ঘোষণার পর সোমবার রাত ৮টায় জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশার নেতৃত্বে এক আনন্দ মিছিল দলীয় কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে। মিছিল শেষে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা জানান, এই মনোনয়ন বগুড়ার সর্বস্তরের মানুষের জন্য খুশির সংবাদ। এই খবর পাওয়ার পরপরই তারেক রহমানকে টেলিফোন করে বগুড়াবাসীর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। তিনি বগুড়াবাসীর কাছে দোয়া ও ভোট প্রার্থনা করেছেন।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে সারা বাংলাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট দিয়ে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বগুড়াবাসী নির্বাচিত করবেন। আমরা আশা করছি বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে তারেক রহমান বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন এবং প্রধানমন্ত্রী হবেন। জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির জন্য মাঠে থাকবে বিএনপি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল