একসময় দেশের আনাচে-কানাচে হুতুম পেঁচার দেখা মিললেও পাখিটি এখন বিলুপ্তির পথে। এর রহস্যময় ডাক শুনে অনেকে অমঙ্গলের পূর্বাভাস বলে মনে করলেও পাখিটি প্রকৃতির উপকারী প্রাণী। সম্প্রতি বিলুপ্তপ্রায় হুতুম পেঁচার দেখা মিলেছে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে। পাখির ছবি তুলেছেন রংপুরের বিশিষ্ট কবি, লেখক ও ওয়ার্ল্ড লাইভ ফটোগ্রাফার রানা মাসুদ। জানা গেছে, পৃথিবীতে ১৯ প্রজাতির হুতোম পেঁচা রয়েছে। তবে বাংলাদেশে মাত্র দুই প্রজাতির হুতোম পেঁচা পাওয়া যায়। হুতোম পেঁচা খুব শক্তিশালী ধরনের পাখি। এরা হরিণশাবক পর্যন্ত ধরে নিয়ে যেতে পারে। চোখের পুরো অংশটি সাদা। চোখের তারা এবং পা হলুদ। পিঠের দিক গাঢ় বাদামি এবং তার ওপর বহু সাদা ফোটা থাকে। এরা জোড়ায় জোড়ায় থাকতে পছন্দ করে। সন্ধ্যা ও রাতে এরা চিকিক চিকিক শব্দ করে। অন্য পাখির সঙ্গে গলা মিলিয়েও এরা ডাকে। বিভিন্ন রকমের ক্ষতিকারক পোকামাকড়, টিকটিকি, পাখির ছানা, নেংটি ইঁদুর এরা খেয়ে থাকে।
পেঁচা সাধারণত গাছের কোটরে কিংবা দালানের ফাঁক-ফোকরে বসবাস করে। এদের প্রজননকাল নভেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে। তিন থেকে চারটি ডিম পাড়ে। ডিম থেকে বাচ্চা বের হতে প্রায় ৩৫ দিন লাগে। ছেলে এবং মেয়ে পাখিদের চেহারা একই রকম দেখতে। এদের কান খাড়া শিঙের মতো। পুরো পা পালকে ঢাকা। সন্ধ্যার পর এরা খাদ্যের সন্ধানে বের হয়। হুতোম পেঁচা বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি। আমাদের দেশে এরা বিপন্ন বলে বিবেচিত। নিশাচর পাখি বলেই এটি সহজে কারও চোখে পড়ে না। তীব্র খাদ্যসংকটের কারণে দেশ থেকে এরা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।
ছরিব কারিগর রানা মাসুদ বলেন, অত্যন্ত নিরীহ কিন্তু উপকারী এ নিশাচর পাখিটি বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির একটি বিরল পাখি। একে নিয়ে গ্রামবাংলায় বিভিন্ন কুসংস্কার প্রচলিত আছে। মনুষ্য অত্যাচার, পরিবেশ ও খাদ্যসংকট এর বিপন্নতার অন্যতম কারণ।