সড়কের ধারে, বাড়ির আঙিনায়, বালুচাপা, মাটিচাপাসহ নানান কৌশলে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল সাদাপাথর। কিন্তু প্রশাসনের সাঁড়াশি অভিযানে লুটেরাদের কোনো কৌশলই কাজে লাগেনি। একে একে বেরিয়ে এসেছে লুট করা পাথরের ভান্ডার। সবশেষ গতকাল পুকুরের ভিতরে লুকিয়ে রাখা পাথর উদ্ধার করেছে প্রশাসন। সিলেট সদর উপজেলার ধোপাগুল ও লালবাগ এলাকার পাঁচটি পুকুরে লুটেরা চক্র লুকিয়ে রেখেছিল প্রায় দেড় লাখ ঘনফুট সাদাপাথর। প্রতিটি পুকুর যেন ছিল সাদাপাথরের খনি।
এই পাথর লুটের ঘটনায় ১৫০০ থেকে ২০০০ জন জড়িত বলে খনিজ সম্পদ ও পরিবেশ সচিবের পক্ষে হাই কোর্টে দাখিল করা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোশনূর রুবাইয়াৎ জানান, গতকাল দুপুরে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ধোপাগুল ও লালবাগ এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় পুকুরের পানিতে লুকিয়ে রাখা বিপুল পরিমাণ পাথর উদ্ধার করা হয়। সিলেট সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরকার মামুনুর রশিদ জানান, পূর্বের জব্দ করা পাথর সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য একটি টিম নিয়ে তিনি ধোপাগুল যান। এ সময় গোপন সূত্রে জানতে পারেন পার্শ্ববর্তী পুকুরগুলোতে লুটকারীরা পাথর লুকিয়ে রেখেছে। এরপর সন্ধান করে ধোপাগুল ও লালবাগের পাঁচটি পুকুর থেকে প্রায় দেড় লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়। এস্কেভেটর দিয়ে পুকুর থেকে পাথরগুলো তুলে আনা হয়।
লুটে ছিল ২০০০ জন : ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর ও পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে পাথর লুটে জড়িত ছিল ১৫০০ থেকে ২০০০ জন। গতকাল খনিজ সম্পদ ও পরিবেশ সচিবের পক্ষে হাই কোর্টে দাখিল করা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সাদাপাথর লুটের ঘটনায় গত ১৫ আগস্ট কোম্পানীগঞ্জ থানায় খনিজ সম্পদ (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইন, ১৯৯২ তৎসহ ৩৭৯/৪৩১ পেনাল কোড ধারায় একটি মামলা করা হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ৫ আগস্ট থেকে সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার গেজেটভুক্ত ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি থেকে অজ্ঞাত ১৫০০ থেকে ২০০০ ব্যক্তি পাথর চুরি করে নিয়ে যায়। আদালতের নির্দেশনা অনুসারে পরিবেশগত আর্থিক ক্ষতি নিরসনের জন্য ২১ আগস্ট অতিরিক্ত সচিব (অপারেশন), জালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগকে আহ্বায়ক করে বুয়েটের একজন অধ্যাপকসহ মোট ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রসঙ্গত, গণমাধ্যমে সাদাপাথর লুটের সংবাদ প্রকাশিত হলে জনস্বার্থে পরিবেশবাদী সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ’ রিট পিটিশন করলে ১৪ আগস্ট হাইকোর্ট রুল জারি করেন। পাশাপাশি সাত দিনের মধ্যে লুট হওয়া সাদাপাথর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করে প্রতিস্থাপনের জন্য স্থানীয় সিভিল প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া লুটের সঙ্গে জড়িতদের তালিকা করে এফিডেভিট আকারে ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত।