চট্টগ্রাম নগরীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র ফয়’স লেক ও চিড়িয়াখানা ঘিরে গড়ে ওঠা আবাসিক হোটেলগুলো অপকর্মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। অসামাজিক কার্যকলাপ, তরুণ-তরুণীদের অবৈধ মেলামেশা, ব্ল্যাকমেইলিং, মাদক বিক্রি-সেবন, জুয়ার আসরসহ নানা অপকর্ম ঘটছে এসব হোটেলে। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে যাওয়া দর্শনার্থীদের জন্য এ এলাকা দিন দিন অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় অভিযোগ জানালেও অদৃশ্য কারণে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় থানা পুলিশ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ম্যানেজ করেই এসব হোটেলে চলছে রমরমা বাণিজ্য।
সরেজমিন দেখা যায়, নগরীর জাকির হোসেন রোড থেকে ফয়’স লেক সড়কে যেতেই ডান পাশে রয়েছে পাঁচটি আবাসিক হোটেল ও গেস্ট হাউস। এসব হোটেল নগরীর খুলশী থানা এলাকায় অবস্থিত। এ সড়কে ফয়’স লেক জামে মসজিদের পাশে রয়েছে প্রিন্স আবাসিক হোটেল। এরপর রয়েছে হেরিটেইজ রিসোর্ট, ফয়’স লেক গেস্ট হাউস, হোটেল স্বপ্ন নিবাস ও মোটেল সিক্স সুপারসনিক। এসব হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় দুই-তিনজন করে দালালকে। ফয়’স লেক বা চিড়িয়াখানার দিকে যাওয়া কিংবা বের হয়ে আসা দর্শনার্থীরা হোটেলের সামনে দিয়ে গেলেই দালালদের খপ্পরে পড়তে হয়। হোটেলে যাওয়ার জন্য নানারকম প্রলোভন দেখানো হয় দর্শনার্থীদের। খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফতাব হোসেন বলেন, হোটেলগুলোতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। শনিবারও ১৮ জনকে আটক করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। পতিতাবৃত্তির দায়ে হোটেল কর্তৃপক্ষের কাউকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে উত্তর না দিয়েই মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন ওসি আফতাব হোসেন। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সৈয়দ মাহবুবুল হক বলেন, আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অভিযান পরিচালনা করা হবে। আবদুল হামিদ সড়কের বাসিন্দা মো. সোলাইমান বলেন, স্কুল-কলেজের তরুণ-তরুণীদের অবৈধ মেলামেশার নিরাপদ স্থানে পরিণত হয়েছে এই এলাকার আবাসিক হোটেলগুলো। এখানে তরুণ-তরুণীরা এক দুই ঘণ্টার জন্য ওঠে, আবার নেমে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রিন্স আবাসিক হোটেল পরিচালনায় রয়েছে রাজু ও সাকিল, হেরিটেইজ রিসোর্ট পরিচালনায় সুমন ও আল আমিন, ফয়’স লেক গেস্ট হাউস পরিচালনায় শামীম ও আজাদ, হোটেল স্বপ্ন নিবাস পরিচালনায় মো. কোব্বাত এবং মোটেল সিক্স সুপারসনিক পরিচালনায় রয়েছেন মো. আনোয়ার। এসব হোটেলে পতিতাবৃত্তি, জুয়ার আসর, মাদক বেচাকেনা ও সেবনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। আর নির্বিঘ্নে এসব অপরাধ কার্যক্রম চালানোর জন্য মাসোহারা দেওয়া হয় স্থানীয় থানা পুলিশকে।
এদিকে ফয়’স লেক গেস্ট হাউসের আজাদ ওরফে কিরিচ আজাদের আতঙ্কে তটস্থ এলাকাবাসী। এ ছাড়া হোটেলগুলোতে মাদক বিক্রি, জুয়ার আসর, বিভিন্ন তরুণ-তরুণীকে ব্ল্যাকমেইলিং করে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়সহ নানা অপকর্ম করে আসছে এই কিরিচ আজাদ।