চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ এলাকায় ৯ অক্টোবর রাতে কয়েকজন শ্রমিক একসঙ্গে মদ পান করেন। ১১ অক্টোবর চারজন অসুস্থ হয়ে মারা যান। ১২ অক্টোবর আরও দুজন মারা যান। নিহতরা হলেন পিরোজখালী গ্রামের লাল্টু হোসেন (৩০), খেজুরা গ্রামের সেলিম (৪০), নফরকান্দি গ্রামের খেদের আলী (৪০), শংকরচন্দ্র গ্রামের শহিদুল মোল্লা (৪৫), ডিঙ্গেদহ টাওয়ারপাড়ার সমীর (৫৫) ও ডিঙ্গেদহ এশিয়া বিস্কুটপাড়ার লাল্টু (৫২)।
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বেজোড়া মধ্যপাড়ায় ২ অক্টোবর রাতে কয়েকজন বিষাক্ত মদপান করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারজনের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন নাছিদুল ইসলাম (২৭), আবদুল মানিক (৩০), আবদুল্লাহেল কাফি (৩০) ও মিজানুর রহমান (৫৫)। একই ঘটনায় অসুস্থ আনসার সদস্য রঞ্জু মিয়া (৩০) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ঝিনাইদহের শৈলকুপার ভান্ডারিয়া এলাকায় ২ অক্টোবর বিকালে বান্ধবীদের সঙ্গে মদপান করেন নন্দিনী রানী সরকার (১৮)। ওই দিন রাতেই তাকে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ৫ অক্টোবর ভোরে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল থেকে মোহাম্মদ রুবেল (৪২) নামে এক পর্যটকের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই পর্যটক শহরের কলাতলী এলাকার হাইপেরিয়ান হোয়াইট প্যালেস হোটেলে অসুস্থ বোধ করেন। সদর মডেল থানার ওসি ইলিয়াস খান জানান, পর্যটকের মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া না গেলেও পুলিশ প্রাথমিকভাবে অতিরিক্ত মদপানে মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, একাধিক অভিযানে বিপুল ভেজাল মদ ধরা পড়ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি নকল মদের কারখানার সন্ধান মিলেছে।
জানা গেছে, দেশীয় চোলাই মদের সঙ্গে অতিমাত্রায় অ্যালকোহল মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে তীব্রতাযুক্ত শক্তিশালী মাদক। যা পান করে ডাকসাইটে মাদকসেবীরাও জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। অনেক ক্ষেত্রে মৃতুর কোলেও ঢলে পড়ে। ড্রিংকসের সঙ্গেও অ্যালকোহল ও অতিমাত্রায় রেকটিফাইড স্পিরিট মিশিয়ে বিভিন্ন নামের এনার্জি ড্রিংক বাজারজাত করা হচ্ছে। চিকিৎসকরা জানান, ভেজাল মদ তৈরির সঙ্গে জড়িতরা মাত্রাতিরিক্ত স্পিরিট ও ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিচ্ছে। ফলে তা পান করে হতাহতের ঘটনা ঘটছে।
ডিএনসি ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের উপপরিচালক মানজুরুল ইসলাম বলেন, ইথানলের সঙ্গে মিথানলের মিশ্রণ করে এক বোতল মদকে ১০ বা ২০ বোতল মদ তৈরি করা হচ্ছে। এই মদ খেলে অন্ধ হয়ে যাওয়া, কিডনি বিকল করে দেওয়া ও হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে।
ডিএনসির প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ডা. দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, মিথানল ও ইথানল দেখতে অনেকটা একই রকম। ইথানল খাওয়ার যোগ্য। মিথানল খাওয়ার অযোগ্য এবং দামে কম। ভেজাল মদে মিথানল ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে সেটি বিষাক্ত হয়ে উঠছে। রং, ফ্লেভার মিশিয়ে বিদেশি বোতলে ভেজাল মদ ভর্তি করা হচ্ছে। অনেকে এসব মদ খেয়ে মারা যাচ্ছেন। কেউ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।