ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বার্জমাউন্টেড বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন দুর্নীতির মামলা বাতিল করে এক যুগের বেশি আগে হাই কোর্ট রায় দিয়েছিলেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে ৫ হাজার ৪৫২ দিন বিলম্ব মার্জনা চেয়ে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি) আবেদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের এ আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ১৫ জুলাই দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ। বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বেঞ্চ গতকাল এ আদেশ দেন। আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান। তিনি জানান, আজ (রবিবার) মামলাটি কার্যতালিকায় ছিল। আদালত পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে ১৫ জুলাই এ আবেদনের ওপর শুনানির জন্য দিন রেখেছেন। ১৯৯৬-৯৭ সালে শিকলবাহা, হরিপুর ও খুলনায় বার্জমাউন্টেড নির্মাণে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুদকের তৎকালীন উপপরিচালক এম এম শাব্বির হাসান তেজগাঁও থানায় মামলা করেন। মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সভাপতি শেখ হাসিনা, সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সচিব তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুদ্দীন মাহমুদ কামাল, সামিটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আজিজ খান, পরিচালক মুহাম্মদ ফরিদ খান, ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রাজা ও পরিচালক আবুল কালাম আজাদকে আসামি করা হয়।
তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ১০ জানুয়ারি চার্জশিট দেওয়া হয়। অভিযোগ গঠনের পর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১-এ ছয়জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। ওই অবস্থায় শেখ হাসিনার আবেদনে বিচারপতি শামসুল হুদা ও বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকীর সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ ২০১০ সালের ১৩ এপ্রিল মামলাটি বাতিল করেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ৫ মার্চ লিভ টু আপিল আবেদন করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এরপর আবেদনটি চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। ১৭ মার্চ চেম্বার আদালত শুনানির জন্য ১৮ মে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠান।
অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান শুরু : এদিকে শেখ হাসিনার অবৈধ সম্পদ নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল দুদক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছেন। সূত্র জানান, শেখ হাসিনার অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে সংস্থাটির উপপরিচালক মাসুদুর রহমানকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে একটি দল কাজ করবে। সম্পদ বিবরণীর নোটিস জারিসহ শেখ হাসিনার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব খতিয়ে দেখবে দুদকের অনুসন্ধানকারী দল।
পূর্বাচলে প্লট জালিয়াতি : পূর্বাচলে প্লট জালিয়াতির মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার-সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২৫ মে দিন ধার্য করেছেন আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালতে আসামিদের গ্রেপ্তার-সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল না করায় বিচারক নতুন এ দিন ধার্য করেন। পূর্বাচলে ১০ কাঠার ওই প্লট বরাদ্দে জালিয়াতির অভিযোগ এনে এ মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর আগে ১০ এপ্রিল ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব মামলার চার্জশিট আমলে নিয়ে শেখ হাসিনা-পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ধানমন্ডিতে নিজের ও পরিবারের অন্য সদস্যদের মালিকানায় রাজউকের এখতিয়ারাধীন এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসনসুবিধা থাকার পরও তা গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দসংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতিমালা এবং আইনি পদ্ধতি লঙ্ঘন করে মা শেখ হাসিনার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।