বিশ্বে যৌন সহিংসতার শিকার হয় প্রতি পাঁচজন নারীর একজন। আর প্রতি সাতজন পুরুষের একজন ১৫ বছর বা তার কম বয়সেই সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এমনই উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জার্নাল দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত এক সাম্প্রতিক গবেষণায়।
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিয়াটল স্কুল অব মেডিসিনের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন (আইএইচএমই) এই গবেষণা পরিচালনা করেছে। গবেষণাটি ১৯৯০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২০৪টি অঞ্চলের বয়স ও লিঙ্গভিত্তিক শিশুর বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার (এসভিএসি) তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রস্তুত করা হয়েছে, যা ‘গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ’ গবেষণার অংশ। গবেষণায় দেখা গেছে, সহিংসতার শিকার ৪২ শতাংশ নারী এবং ৪৮ শতাংশ পুরুষ ১৬ বছর বয়সের আগেই যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। আরও আশঙ্কাজনক তথ্য হলো, তাদের মধ্যে ৮ শতাংশ নারী এবং ১৪ শতাংশ পুরুষ ১২ বছর বয়সের মধ্যেই যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। আইএইচএমই’র অধ্যাপক ও গবেষণার জ্যেষ্ঠ লেখক ড. ইমানুয়েলা গাকিদোউ বলেন, শিশুদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতা একটি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং জনস্বাস্থ্য সংকট। বিশ্ব এ সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ হচ্ছে। এত অল্প বয়সে এত বেশি শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং এর বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি। ২০২৩ সালের এসভিএসির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৯ শতাংশ নারী ও ১৫ শতাংশ পুরুষ শৈশবেই যৌন সহিংসতার শিকার। ১৯৯০ সালের পর এক্ষেত্রে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। স্বল্প আয়ের, মধ্যম আয়ের বা উচ্চ আয়ের দেশেও এই হারে তেমন কোনো পার্থক্য দেখা যায়নি। যেসব দেশে নারীদের মধ্যে এই হার সবচেয়ে বেশি সেগুলো হলো-সলোমন দ্বীপপুঞ্জ (৪৩ শতাংশ), আইভরি কোস্ট (৩২ শতাংশ) এবং চিলি, কোস্টারিকা ও ভারতে প্রায় ৩১ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে এই হার প্রায় ২৮ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্যে ২৪ শতাংশ। পুরুষদের ক্ষেত্রে আইভরি কোস্ট এবং বাংলাদেশে ২৮ শতাংশ, বতসোয়ানায় ২৭ শতাংশ, হেইতিতে ২৬ শতাংশ এবং নাইজেরিয়ায় ২৪ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে এই হার ১৬ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্যে প্রায় ১৭ শতাংশ। শৈশবেই নারীদের যৌন সহিংসতার শিকার হওয়ার হার বেশি দক্ষিণ এশিয়ায় ২৭ শতাংশ আর পুরুষের বেলায় সাব-সাহারান আফ্রিকায় ১৯ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শিশুদের ওপর যৌন সহিংসতার নির্ভরযোগ্য তথ্য রেকর্ড ও বিশ্লেষণের জন্য বৈশ্বিকভাবে একক মানদণ্ড স্থাপন করা প্রয়োজন। এর মাধ্যমে নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ, রিপোর্টিং এবং সঠিক সহায়তা প্রদান আরও কার্যকরভাবে নিশ্চিত করা যাবে এবং শিশুর সুরক্ষায় আরও শক্তিশালী নীতি গ্রহণ সম্ভব হবে।