কৃষ্ণচূড়া, জারুল এবং সোনালু ফুল প্রায় একই সময়ে ফোটে। এ তিন ধরনের ফুলই বাহারি ধরনের। এ গাছগুলো একসঙ্গে বীথি করে লাগালে ফুল ফুটলে মনোহর দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। এই তিন ধরনের গাছ, ফুল ও ফলের রয়েছে অনেক ওষুধি গুণ। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে এখন এ ফুলগুলো সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে।
জানা গেছে, লাল টুকটুকে উজ্জ্বল রঙের কৃষ্ণচূড়া ফুল বহুদূর থেকেই চোখে পড়ে। যা গ্রীষ্মজুড়েই প্রকৃতিকে রাঙিয়ে রাখে। গাছ মাঝারি আকারের, ডালগুলো নিচের দিকে নুয়ে থাকে। পাতাগুলো খুবই সুন্দর। গরমের শুরুতে একপশলা বৃষ্টি হলেই মরা ডালে নতুন পাতার আগেই ফুলের কুঁড়ি উঁকি দিতে শুরু করে। তখন গাঢ় লাল, কমলা, হলদে এবং হালকা হলদে রঙের ফুলে ভরে ওঠে গাছ। দূর থেকে গোটা গাছটাকেই একটা বিশাল ফুলের তোড়া মনে হয়। মাসখানেকের মধ্যেই ফুলের সংখ্যা কমে আসতে থাকে। ধীরে ধীরে নতুন পাতা গজায়। একসময় সবুজ পাতায় ঢাকা পড়ে গোটা গাছ। নজরকাড়া শোভা দেখে জারুল ফুলকে খুব সহজেই চেনা যায়। অনেক ফুলের ভিড়ে উজ্জ্বল বেগুনি রঙের একমাত্র বড় ফুল জারুল। শীতে সব পাতা ঝরার পর মরার মতো দাঁড়িয়ে থাকে গাছ। মাঝারি আকারের গাছ। পাতা লম্বা, চওড়া ও গাঢ় সবুজ। দেখতে অনেকটা পেয়ারা পাতার মতো। চৈত্র মাসের প্রথম দিকেই কচি পাতার সঙ্গে বেগুনি রঙের ফুলগুলো ফুটতে শুরু করে। থাকে প্রায় বর্ষার প্রথম ভাগ পর্যন্ত। সোনালু আমাদের দেশের খুব পরিচিত গন্ধহীন ফুল। সোনালু মাঝারি আকারের বৃক্ষ জাতীয় ফুলগাছ। পাতার আকৃতি ডিমের মতো। সোনালুর আরও কিছু প্রচলিত নাম সোনাইল, সোন্দাল, সোঁদাল, বানরলাঠি ইত্যাদি। এ ফুল ফুটে ঝুলন্ত মঞ্জরিতে। ফুলের রং হলুদ-সোনালি ধরনের। ঝাড়লণ্ঠনের মতো দোদুল এ ফুলে সারা গাছ ছেয়ে গেলে দৃষ্টি ফেরানো কঠিন হয়ে পড়ে। ফল দেখতে এক-দেড় হাত লাঠির মতো। এ জন্য এর নাম রাখা হয়েছে বানরলাঠি। এ গাছ বাংলাদেশের যে কোনো স্থানে অবহেলায় অনাদরে বড় হয়ে ওঠে।
বাংলা একাডেমির সহপরিচালক এবং বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবিদ করিম মুন্না জানান, কৃষ্ণচূড়ার অপরূপ সৌন্দর্য ছাড়াও এর পাতা, মূলের বাকল ও ফুল ভেষজ গুণসম্পন্ন। যা জ্বর ও খুশকি নিরাময়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। জারুল কাঠ লালচে রঙের, অত্যন্ত শক্ত ও মূল্যবান। লাঙল, আসবাবপত্র তৈরিসহ বহুবিধ কাজে জারুল কাঠ সুব্যবহৃত। জারুলের ভেষজ গুণও রয়েছে। জ্বর, অনিদ্রা, কাশি ও অজীর্ণতায় জারুল উপকারী। সোনালু গাছের বাকল এবং পাতায়ও ওষধি গুণাগুণ রয়েছে। এ গাছের বাকল এবং পাতা ডায়রিয়ায় আর বহুমূত্রে ব্যবহৃত হয়।